প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:২০
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশের কনডেনসেট পাইপলাইনে দুর্বৃত্তদের অবৈধ ছিদ্রের কারণে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার ২ নম্বর ভূনবীর ইউনিয়নের শাসন উত্তর ইলাম গ্রামে হঠাৎ আগুন ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে একই পরিবারের মা, বাবা ও ছেলে গুরুতর দগ্ধ হন। আহতরা হলেন বশির মিয়া (৫৫), তাঁর স্ত্রী ফারজানা আক্তার পারভীন (৪৬) এবং ছেলে রেজোয়ান মিয়া (২১)।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সালেক মিয়া জানান, আগুনের আগে বিকেল থেকে বাতাসে তেলের তীব্র গন্ধ অনুভূত হয়। বিষয়টি ইউএনওকে জানানো হলে শেভরনের কর্মীরা পাইপলাইনের ছিদ্র মেরামতের চেষ্টা করেন। তবে রাত ৯টার দিকে পাইপলাইনের তেল লিক হওয়া অংশে আগুন ধরে যায়। প্রথমে এলাকার মানুষ এবং স্থানীয় প্রশাসন আতঙ্কিত হয়ে যান।
ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, পাইপলাইন থেকে ছড়ানো তেল আশেপাশের পানিতে মিশে হাওরের দিকে চলে যায়, এতে মাছ ভেসে ওঠে এবং অনেকেই মাছ ধরতে গিয়ে বিপদে পড়েন।
দগ্ধদের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় প্রথমে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় জাতীয় বার্ণ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. মৌমিতা জানিয়েছেন, আহতদের তৎক্ষণাৎ প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা সোলাইমান আকনজি বলেন, প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল বিদ্যুতের তারে আগুন লেগেছে, পরে দেখা গেছে এটি পাইপলাইনের তেল থেকে উদ্ভূত। পাইপলাইনে অতিরিক্ত চাপ থাকায় শুরুতে আগুন নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হচ্ছিল। ফোম ব্যবহার করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
শেভরন বাংলাদেশের মিডিয়া ও যোগাযোগ ব্যবস্থাপক শেখ জাহিদুর রহমান জানান, দুর্বৃত্তরা পাইপলাইনে অবৈধভাবে ট্যাপিং করায় তেল লিক হয় এবং রাতের অন্ধকারে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। কোম্পানির গ্যাস উৎপাদনে কোনো প্রভাব পড়েনি। তদন্ত এখনও চলমান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইসলাম উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতি এড়ানো গেছে। দগ্ধদের সুচিকিৎসা ও ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য প্রশাসন কাজ করছে।
স্থানীয়দের মতে, এই অগ্নিকাণ্ডে শুধু প্রাণহানি নয়, প্রকৃতি ও পরিবেশেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানিতে তেল ছড়িয়ে যাওয়ায় মাছ ভেসে উঠেছে এবং হাওরের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। প্রশাসন তদন্ত শেষে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও আগুনের প্রকৃত কারণ জানাবে।