পবিত্র ঈদুল আজহার আর মাত্র তিন দিন বাকি। এরইমধ্যে মৌলভীবাজার জেলার কোরবানির পশুর হাটগুলো জমে উঠেছে। জেলার ৭টি উপজেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে বসেছে ৫৭টি পশুর হাট। জেলা শহর ও গ্রামের হাটগুলোতে গতকাল থেকে ব্যাপক ক্রেতা ও বিক্রেতার সমাগম দেখা গেছে।
জানা যায়, এবারের ঈদে মৌলভীবাজার জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা ৭৯ হাজার ৯২৯টি হলেও স্থানীয় খামারিদের কাছে মজুত রয়েছে ৮০ হাজার ৬৩৭টি পশু। ফলে জেলার পশুর বাজারে চাহিদার চেয়ে ৭০৮টি পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে।
সদর, কমলগঞ্জ, রাজনগর ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, হাটে গরু, মহিষ ও ছাগল নিয়ে বিপুল সংখ্যক খামারি ও পাইকার অংশ নিয়েছেন। অনেকেই রাজশাহী, হবিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পশু নিয়ে এসেছেন।
শ্রীমঙ্গল শহরের সাগরদিঘি পাড়ের কোরবানির পশুর হাটে দেখা যায়, রাজশাহী থেকে আনা ‘কালো মানিক’ নামের একটি হরিয়ানা জাতের ১৫ মণ ওজনের গরু সবার নজর কেড়েছে। কালচে রঙের এ গরুটির দাম হাঁকা হচ্ছে ৯ লাখ টাকা। তবে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ দাম উঠেছে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা।
এ হাটে আরও ১৭টি গরু এনেছেন ব্যবসায়ী রুহুল আমিন, যেগুলোর দাম ৪ লাখ থেকে ৮ লাখ টাকার মধ্যে। তিনি জানান, হাটে ভিড় থাকলেও ক্রেতারা বেশি দরদাম করে চলে যাচ্ছেন। তবে ঈদের আগের দিন বিক্রি বাড়বে বলে তার আশা।
কমলগঞ্জের আদমপুর হাটে ৩৮টি পশু নিয়ে আসা আজিম উদ্দিন বলেন, “এখন পর্যন্ত ৭টি বড় ও ১১টি মাঝারি গরু বিক্রি করেছি। দরদাম হচ্ছে, তবে বিক্রি তুলনামূলক কম।”
বাজারে অধিকাংশ ক্রেতার পছন্দ মাঝারি আকারের গরু। তবে তারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার দাম কিছুটা বেশি। বিক্রেতারা এর পেছনে গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধিকে দায়ী করছেন।
বাজারের নিরাপত্তা নিশ্চিতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন জানান, নির্বিঘ্নে ঈদ উদযাপনের লক্ষ্যে প্রতিটি পশুর হাটে নজরদারি, আইনশৃঙ্খলা ও ভোক্তা স্বার্থ রক্ষায় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আশরাফুল আলম খান জানান, সুস্থ পশু বিক্রি নিশ্চিত করতে জেলায় ২২টি মেডিকেল টিম মাঠে কাজ করছে। বাজারে চোরাই পথে বিদেশি পশু প্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে কড়া নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।
পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন হাটের ইজারাদারদের সাথে মতবিনিময়ে বলেন, কোনো অবস্থাতেই রাস্তা অবরোধ করে দোকান বসানো যাবে না, জাল টাকা, চাঁদাবাজি, অজ্ঞান পার্টি ইত্যাদি বিষয়ে কঠোর নজরদারি থাকবে। প্রত্যেক হাটে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার নাম ও মোবাইল নম্বর ব্যানারে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ দেন তিনি।
পাশাপাশি ইজারাদারদের পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক, আলোর ব্যবস্থা ও সিসি ক্যামেরা স্থাপনের আহ্বান জানানো হয়েছে। হাটে যেন কেউ অসুস্থ পশু না আনেন এবং কোনো ভোক্তা হয়রানির শিকার না হন, সেজন্য ভলান্টিয়াররা সার্বক্ষণিক কাজ করছেন বলে জানান শ্রীমঙ্গলের সাগরদিঘি হাটের ইজারাদার দুলাল হাজী।