রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ থেকে পাবনার পাকশী পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নৌ চ্যানেলে নৌযান চলাচলের চার্জ আদায়ের জন্য বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর নিয়ম অনুযায়ী এক বছরের জন্য ইজারা নিয়েছিলেন ব্যবসায়ী মো. আবু সাঈদ খান। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতা, নিরাপত্তার অভাব এবং সুনির্দিষ্ট সীমানা চিহ্ন না থাকায় শুরু থেকেই চরম ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে।
২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ইজারার মেয়াদ নির্ধারিত হয়। বিআইডব্লিউটিএর ২৭ অনুচ্ছেদের "ক" ধারা মোতাবেক ৩ কোটি টাকায় ইজারাটি লাভ করেন আবু সাঈদ খান। সঙ্গে ভ্যাট ও আয়কর হিসেবে আরও ৭৫ লাখ টাকা মিলে মোট বিনিয়োগ দাঁড়ায় ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন তৎকালীন আরিচা নদী বন্দরের উপ-পরিচালক মো. মামুন অর রশীদ।
তবে ইজারা কার্যকর হওয়ার পর থেকেই সমস্যা শুরু হয়। মো. আবু সাঈদ খান জানান, “নির্ধারিত সীমানা চিহ্ন ছাড়া নৌচ্যানেল বুঝিয়ে না দেওয়ায় আমি চার্জ আদায়ে চরম সমস্যায় পড়েছি। আগস্ট মাসের ৫ তারিখ থেকে টানা তিন মাস আদায় কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। এতে প্রায় অর্ধেক টাকা তুলতে পারিনি।”
তিনি আরও বলেন, “পাকশী থেকে গোয়ালন্দ পর্যন্ত ধাওয়াপাড়া ও শিলাইদহসহ চারটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চারটি পন্টুন প্রয়োজন হলেও বিআইডব্লিউটিএ আমাকে একটি পন্টুনও দেয়নি। নদীতে নেই কোনো সীমানা চিহ্ন, নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, অথচ আমি সরকারি নিয়ম মেনেই কাজ করছি।”
অন্যদিকে, সীমানা চিহ্ন না থাকার সুযোগ নিচ্ছে কিছু অসাধু নৌযান মালিক। তারা প্রতিদিন সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বিনা চার্জে চলাচল করছে গোয়ালন্দ-পাকশী নৌপথে। এতে সরকারের রাজস্ব ক্ষতির পাশাপাশি বৈধ ইজারাদার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, “যদি একজন বৈধ ইজারাদার সরকারের নিয়ম মেনে কাজ করেও এমন ভোগান্তির শিকার হন, তাহলে ভবিষ্যতে কেউ আর এমন ইজারায় আগ্রহী হবেন না।”
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র বর্তমান আরিচা নদী বন্দরের উপ-পরিচালক সেলিম শেখ বলেন, “টেন্ডার অনুযায়ী সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ইজারা দেওয়া হয়েছে এবং সকল নিয়ম মেনেই চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। পন্টুন দেওয়ার কোনো শর্ত চুক্তিপত্রে ছিল না, তাই পন্টুন সরবরাহ করা হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “ইজারাটি জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়নি, বরং স্বেচ্ছায় ও প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে আবু সাঈদ খানকে নির্বাচিত করা হয়েছে।”