দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা এক মামলায় যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি ও সাবেক সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ঘটনায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে টিউলিপ সিদ্দিক অভিযোগ করেছেন, তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তিনি এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং হয়রানিমূলক বলে দাবি করেছেন।
লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে টিউলিপ সিদ্দিক জানান, এ ধরনের অপপ্রচারের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে এবং বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ তার সঙ্গে সরাসরি কোনো যোগাযোগ না করেই মিডিয়া ট্রায়ালের আশ্রয় নিয়েছে। তার আইনজীবীরা বাংলাদেশে চিঠি পাঠিয়েও কোনো উত্তর পাননি বলে তিনি দাবি করেন।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মামলার বিষয়ে টিউলিপের আইনজীবী স্টিফেনসন হারউড জানিয়েছেন, সকল অভিযোগ মিথ্যা এবং তারা আইনি প্রক্রিয়ায় এসবের জবাব দিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, একজন আন্তর্জাতিক রাজনীতিককে এভাবে টার্গেট করাটা দুঃখজনক।
অন্যদিকে, বিবিসির হাতে পাওয়া নথি অনুযায়ী, ২০১৩ সালে রাশিয়ার সঙ্গে একটি পারমাণবিক চুক্তির মধ্যস্থতায় সহায়তার সময় দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন ববি হাজ্জাজ। তিনি দাবি করেন, চুক্তির ব্যয় বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে এবং এতে টিউলিপ সিদ্দিক জড়িত ছিলেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক তদন্ত শুরু করে।
দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন জানান, মামলাগুলো কারও বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয় বরং দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে। তিনি টিউলিপকে দেশে ফিরে আইনি সহায়তা নিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের আহ্বান জানান। তার মতে, বিচার থেকে দূরে থাকা যুক্তিযুক্ত হবে না।
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনার শাসনামলে নানা দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করছে দুদক, যা শুরু হয় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার পরিবর্তনের পর। এই তদন্তের অংশ হিসেবেই টিউলিপের বিরুদ্ধে প্লট বরাদ্দে অনিয়মসহ অন্যান্য অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মোট ৫৩ জনের বিরুদ্ধে জারি হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের মুখপাত্র এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করলেও টিউলিপের আইনজীবীরা জানান, গত কয়েক মাস ধরে দুদক শুধুমাত্র গণমাধ্যমের মাধ্যমে অভিযোগ উপস্থাপন করে আসছে, যা বিচারিক প্রক্রিয়ার সাথে সাংঘর্ষিক। তারা এ ঘটনাকে একটি আন্তর্জাতিক মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিকে বিব্রত করার কৌশল হিসেবে দেখছেন।
লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট আসনের সংসদ সদস্য টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশে মামলার খবর প্রকাশের পর জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে সরে দাঁড়ান। বাংলাদেশ যেহেতু যুক্তরাজ্যের ২বি শ্রেণির প্রত্যর্পণ দেশ, তাই টিউলিপকে দেশে ফেরত পাঠাতে হলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শক্ত ও নির্ভরযোগ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে।