প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ৩:৯
রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলায় একটি মর্মান্তিক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। ১৭ বছর বয়সী শাফিন মন্ডল নামক এক তরুণ, যিনি পাংশা উপজেলার হাবাসপুর ইউনিয়নের চরআফড়া গ্রামের বাসিন্দা, মোটরসাইকেল কিনে না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে রোববার (২৬ জানুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। শাফিনের বাবা, মিলন হোসেন, একজন ট্রাক চালক।
শাফিন মন্ডল কিছুদিন ধরে তার পরিবারকে মোটরসাইকেল কিনে দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল। বিশেষত, তার এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর তার মনোযোগ একেবারে এই বিষয়টি নিয়েই ছিল। একাধিকবার সে তার বাবা-মা এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছে মোটরসাইকেল পাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল। তবে, পরিবার তার এই আবদারে সাড়া না দেওয়ায় শাফিনের হতাশা বেড়ে গিয়েছিল।
এ দিন, শাফিন রেলওয়ে ব্রিজ এলাকায় গিয়ে পোড়াদহ থেকে ছেড়ে আসা গোয়ালন্দঘাটগামী শাটল ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেয়। ঘটনাটি ঘটার পর শাফিনের মামা, আমিরুল ইসলাম, স্থানীয় পুলিশকে খবর দেন। শাফিনের লাশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর তার মামা শাফিনকে সনাক্ত করেন।
রাজবাড়ী রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম জানান, খবর পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। তারা প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে এবং পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। পুলিশের দাবি, শাফিনের আত্মহত্যা মোটরসাইকেল না পাওয়া নিয়ে তার মধ্যে জমে থাকা হতাশার ফলস্বরূপ হতে পারে।
শাফিনের পরিবারের সদস্যরা বলেন, তিনি বেশ কিছুদিন ধরে মোটরসাইকেল পাওয়ার জন্য আবদার করেছিলেন, তবে আর্থিক অসুবিধার কারণে তার পরিবার তাকে তা কিনে দিতে পারেনি।
এই ঘটনাটি স্থানীয় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। শাফিনের বন্ধুরা এবং স্থানীয়রা তার আচরণে যে ধরনের চাপ অনুভব করছিলেন, তা নিয়ে শোক প্রকাশ করেছেন। অনেকেই তার পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন। এক স্থানীয় ব্যক্তি জানান, শাফিনের অকাল মৃত্যু একটি বড় ধরনের সামাজিক সমস্যা তুলে ধরেছে, বিশেষত যুবকদের মধ্যে মানসিক চাপ এবং হতাশা বেড়ে যাওয়ার কারণে তারা একে অপরের কাছে অনেক কিছু আশা করেন।
এদিকে, স্থানীয়দের মধ্যে এ ধরনের ঘটনা রোধে আরও সচেতনতা বৃদ্ধির দাবি উঠেছে। বিশেষ করে, পরিবারের সদস্যদের উচিত যুবকদের মনোভাব এবং আবেগের প্রতি আরও মনোযোগী হওয়া। এতে করে একদিকে যেমন আত্মহত্যার প্রবণতা কমানো যাবে, তেমনি পরিবারের মধ্যে আরও সুস্থ ও মধুর সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব হবে।
এ ঘটনার পর রাজবাড়ী রেলওয়ে থানা পুলিশ এখন পর্যন্ত ময়নাতদন্তের জন্য লাশ পাঠিয়েছে এবং আত্মহত্যার পেছনে বিস্তারিত কারণ অনুসন্ধানের কাজ চলছে।
এই ধরনের ঘটনাগুলির মাধ্যমে সমাজে মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলো আরও গুরুত্ব সহকারে নেয়া উচিত। বিশেষ করে, যুবকরা যখন জীবনের এমন কঠিন পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন তাদের পাশে থাকতে হবে এবং যথাযথ সহায়তা দিতে হবে। শাফিনের মৃত্যুর পর একাধিক সামাজিক সংগঠন এবং স্থানীয় নেতারা এ বিষয়ে কথা বলেছেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন।
শাফিনের পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করে, স্থানীয় প্রশাসন তার আত্মহত্যার পেছনে প্রাথমিক তদন্তের মাধ্যমে অন্য যেকোনো পরিস্থিতি সঠিকভাবে তদন্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এটি ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে সহায়ক হবে।
এই দুঃখজনক ঘটনাটি তার পরিবারের জন্য চিরকাল একটি কষ্টের স্মৃতি হয়ে থাকবে। তার শোকাহত পরিবারকে সহানুভূতি জানানো হচ্ছে, আর আশাকরা হচ্ছে, সমাজে আরো ভালো সেবা ও সহায়তা প্রদান করা হবে, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর না ঘটে।