প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭:৫০
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে গত কয়েকদিন ধরে তীব্র শীতের প্রকোপে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। ২৬ জানুয়ারি রবিবার সকালে শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিস তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে, যা গতকালের তুলনায় বেশ কম। গত শনিবার শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই অবস্থা আরও তীব্র হতে পারে, কারণ শ্রীমঙ্গলের প্রকৃতি একটানা কুয়াশায় আচ্ছাদিত এবং সূর্যের দেখা নেই।
বেশ কয়েক দিন ধরে শ্রীমঙ্গলে সূর্যদয় ঘটছে না, এবং কুয়াশা পুরো শহর এবং এর আশপাশের এলাকা ঢাকা পড়েছে। আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতির কারণে চা-বাগান এবং কৃষি খাতে কাজ করা মানুষদের জন্য চলাফেরা করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। ঠাণ্ডা বাতাস ও কনকনে শীতের কারণে খেটেখাওয়া মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়েছে।
শ্রীমঙ্গল ও সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানসহ হাইল হাওরসহ ছোট-বড় অনেক হাওর রয়েছে, যেখানে কৃষকরা বোরো ধান আবাদ করে থাকেন। শীতের কারণে এই অঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষদের কাজ করতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ভোর হতেই কৃষকরা মাঠে কাজ করতে বের হলেও, তীব্র কুয়াশা তাদের কাজের গতি থামিয়ে দিয়েছে। তিন দিন ধরে একটানা এই অবস্থায় থাকা চাষি ও শ্রমিকরা খুবই কষ্ট পাচ্ছেন।
শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের কৃষক রঈস মিয়া জানান, এখন বোরো ধান রোপণের শেষ সময়। কিন্তু তীব্র কুয়াশার কারণে ৫০০ টাকার শ্রমিক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ৬০০ টাকাতেও শ্রমিকেরা কাজে আসছেন না, যা কৃষির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। একদিকে যেমন শীতের প্রকোপ বেড়েছে, অন্যদিকে শ্রমিকের অভাব কৃষকদের জন্য অদূর ভবিষ্যতে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার শ্রমিকদের জন্য পরিস্থিতি আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। চা-বাগানগুলোর এলাকায় শীতের কারণে কাজের গতি কমে গেছে। চা শ্রমিকরা জানান, ঠাণ্ডা ও কুয়াশার মধ্যে তাদের কাজ করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সকালবেলা ও সন্ধ্যায় এই সমস্যাটি আরো প্রকট হয়ে উঠছে। শ্রীমঙ্গলের চা-বাগানে কাজ করা শ্রমিকদের অনেকেই বোরো ধান রোপণের কাজে সহায়তা দিতে যান, তবে তাদের কাজের দক্ষতা তীব্র শীতের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এদিকে, স্থানীয় ট্রাকচালক শাহজাহান মিয়া জানান, তীব্র কুয়াশার কারণে দিনের বেলায়ও তিনি তার ট্রাকের হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করেন। রাতে ফগলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চালানো আরও কঠিন হয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, "দুর্ঘটনা এড়াতে দিনের বেলায়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হয়, তবে রাতে খুব বেশি সতর্ক থাকতে হয়, কারণ কুয়াশার কারণে স্বাভাবিকভাবে গাড়ি চালানো সম্ভব হয় না।"
শ্রীমঙ্গলের এই অবস্থা সাধারণ মানুষের জন্য বিশেষ করে যাদের জীবিকা নির্ভর করে দিনের কাজের উপর, তাদের জন্য বিপদজনক হয়ে উঠেছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, শীতের কারণে তাদের কাজের সময় কমে যাচ্ছে এবং কিছু শ্রমিক কাজে যেতে পারছেন না। কৃষকরা যদি পর্যাপ্ত শ্রমিক না পান, তবে তাদের ফসলের উৎপাদন কম হতে পারে এবং কৃষি খাতের উন্নতির পথে এটি একটি বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে।
শ্রীমঙ্গলে শীতকালীন পরিস্থিতি আরও চরম হতে পারে, বিশেষ করে যদি কুয়াশা আরো ঘনীভূত হয় এবং তাপমাত্রা আরও নেমে যায়। শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিসের পর্যক্ষক মুজিবুর রহমান জানিয়েছেন, ২৬ জানুয়ারি সকাল ৬টায় শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র শীত এবং কুয়াশার কারণে এলাকাবাসীকে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে এবং তারা যাতে সহজেই শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে পারে, সেই জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক সহায়তা প্রয়োজন হতে পারে।
এছাড়া, শ্রীমঙ্গল অঞ্চলের কৃষক ও শ্রমিকদের জন্য সরকারিভাবে সহায়তার প্রয়োজন। শীতের তীব্রতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে তাদের জন্য বিশেষ রেশনিং ব্যবস্থা ও শীতবস্ত্র বিতরণ করা যেতে পারে, যা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে। বিশেষত, শ্রমজীবী মানুষের জন্য শীতকালীন সুরক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এই শীতের তীব্রতা মোকাবিলা করতে স্থানীয় প্রশাসন এবং জনসাধারণকে একসাথে কাজ করতে হবে। ভবিষ্যতে আরও একাধিক শীতকালীন প্রস্তুতি গ্রহণের মাধ্যমে, শ্রীমঙ্গলের জনগণ এই কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে, তবে এটির জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।