২০০৭ সালে মায়ের চিকিৎসার জন্য সিলেটের এক নারী পরিবারের সঙ্গে ভারতের আসামে আসেন। তখনই সেখানকার একটি যুবকের সঙ্গে পরিচয় হয়, যা পরে প্রেম ও বিয়েতে পরিণত হয়। দীর্ঘ ১৭ বছর পর, সেই নারী ভারতের নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদন করেছেন। তবে এই আবেদন প্রক্রিয়া ছিল দীর্ঘ ও জটিল।
ডয়চে ভেলেকে উদ্ধৃত করে জানা যায়, ২০০৭ সালে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মায়ের চিকিৎসার জন্য এসে ওই নারী পরিচিত হন বদরপুর শহরের এক যুবকের সঙ্গে। যুবকটি সিলেটের মেয়ে এবং তার পরিবারকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। এই সম্পর্ক ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব ও প্রেমে পরিণত হয়। দুই পরিবারের সম্মতিতে, ২০১০ সালে তারা হিন্দু রীতিতে বিয়ে করেন। এরপর ওই নারী ভারতেই থেকে যান এবং একটি সন্তানও হয় তাদের। তবে, নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে তিনি কখনোই ভারতের একজন নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পাননি।
২০১৯ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) পাস করে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন ও পার্সি সম্প্রদায়ের সদস্যদের জন্য নাগরিকত্বের দরজা খুলে দেওয়া হয়। সেই আইনের আওতায়, ২০১৯ সালে ওই নারী ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন। তবে, এই আইনের অধীনে আবেদন করতে গেলে প্রমাণ দিতে হয় যে, আবেদনকারীকে ধর্মীয় নির্যাতনের কারণে দেশ ছাড়তে হয়েছে এবং তিনি ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে ভারতে প্রবেশ করেছেন।
ওই নারীর আবেদন নিয়ে চলমান জটিলতা প্রকাশ পায়, যখন তাকে প্রথমে করিমগঞ্জ জেলার নাগরিক হিসেবে আবেদন করতে বলা হয়, তবে কিছুদিন পর দেখা যায়, তার বর্তমান বাসস্থান কাছাড় জেলার আওতায়। তাই, তিনি প্রথম আবেদনটি প্রত্যাহার করেন এবং আবার আবেদন করতে বাধ্য হন। ফরেনার্স ট্রাইবুনালের বিচারক ধর্মানন্দ দেব জানান, "তার নাগরিকত্বের আবেদন এখন বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে, এবং আমরা আশা করছি খুব শিগগিরই তিনি ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন।"
এদিকে, ২০১৯ সালে সিএএ পাস হওয়ার পর থেকেই আসামের মধ্যে ফরেনার্স ট্রাইবুনাল থেকে অনেক মানুষ নোটিশ পেয়েছেন এবং বহু পরিবারই নাগরিকত্ব প্রক্রিয়ার আওতায় আসেন। তবে, সিএএ আইনের প্রণয়নবিধি যখনই প্রকাশিত হয়, তখন থেকেই আসামের বদরপুর, করিমগঞ্জ সহ বিভিন্ন এলাকাতে বাংলাদেশি শরণার্থীদের নাগরিকত্বের আবেদন জমা পড়তে থাকে।
বিভিন্ন আইনজীবী ও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই প্রক্রিয়া এখনো চলমান থাকলেও, ওই নারীর নাগরিকত্বের আবেদন প্রক্রিয়া আশাব্যঞ্জক। তবে, নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য প্রমাণ প্রদানের ক্ষেত্রে কিছু কিছু জটিলতা থাকলেও, তাকে এখনো বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে কোন সমস্যা হয়নি।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।