দেবীদ্বারে কৃত্রিম সার সংকট দেখিয়ে অতিরিক্ত মূল্য আদায় করার অভিযোগে কয়েকশত কৃষক বিক্ষোভ করেছে এক ডিলারের দোকানে। রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় উপজেলার সুবিল ইউনিয়নের সার ডিলার হাজী মোঃ শাহ আলমের ওয়াহেদপুর বাজারের সার দোকানের সামনে ওই বিক্ষোভ হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সার নিতে আসা বাজারের ব্যাগ ও এলমুনিয়ামের বলসহ সার বহনের নানা সামগ্রী নিয়ে সার না পেয়ে কয়েকশত কৃষক বিক্ষোভ প্রদর্শণ করছে।
ওয়াহেদপুর গ্রামের ভোক্তভূগী কৃষক মোঃ জামাল ভূঁইয়া জানান, নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান সারওয়ার হোসেন মুকুল ভূঁইয়া গত ১১ ফেব্রুয়ারী সার ডিলারকে সতর্ক করে বলেন, এখন থেকে সার দোকানের সামনে লাল ব্যানারে সারের মূল্য তালিকা প্রদর্শন এবং কৃষকরে কাছে সার বিক্রয় করার সময় রসিদের মাধ্যমে টাকা গ্রহন করতে হবে। ওই নির্দেশনার পর আমি ১১শত ৩০ টাকার সার কিনি, তখন আমি রসিদ চাওয়াতে তিনি সারের মূল্য ৮শত টাকা রেখে ৪৩০ টাকা ফেরত দেন। ওই ঘটনা কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে সার কিনতে আসা প্রত্যেক কৃষকই রসিদ দাবী করেন। এই পরিস্থিতিতে সার ডিলার গত এক সপ্তাহ ধরে সার সংকট দেখিয়ে সার বিক্রয় করছেন না। রোববার স্থানীয়দের চাপে ডিলার সার গুদাম খুললে সেখানে অনেক সার মজুদ দেখতে পাই।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, সার ডিলার হাজী মোঃ শাহ আলম প্রায় ১৫ বছর ধরে সুবিল ইউনিয়নের সার ডিলার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আমরা আমাদের প্রয়োজনে সার নিলেও দাম সম্পর্কে কোন ধারনা ছিলনা। সার ডিলার যা বলতেন তা দিয়েই আমরা সার কিনেছি। নতুন চেয়ারম্যান যখন কৃষকদের সার কেনার সময় রসিদ নিয়ে সার ক্রয় করতে বললেন, তখন থেকে সার সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতি বস্তা সারে আমাদের থেকে ৬/৭শত টাকা করে বেশী নিতেন এই সার ডিলার।
কৃষক সুলতান আহমেদ বলেন, ১হাজার ১শত টাকা মূল্যের ১ বস্তা দানা সার ২ হাজার টাকায়, ৮শত টাকার ইউরিয়া সার ১ হাজার টাকায় এবং ৮ শত টাকার ১ বস্তা ডেব সার ১ হাজার ৪শত টাকায় কিনতে হয়েছে। এ- ৩ বস্তা সারের মূল্য ২ হাজার ৭শত টাকার স্থলে আমার থেকে ৪ হাজার ৪শত টাকা আদায় করলেও কোন রসিদ দেননি। ডিলার সাহেব যে ট্রেড লাইসেন্সে ব্যবসা করছেন, সে লাইসেন্সে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর থাকলেও সচিবের স্বাক্ষর নেই। তাছাড়া সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ আবু তাহেরের যোগ সাজসে এই ডিলার দির্ঘদিন ওই অবৈধ ব্যাবসা চালিয়ে আসছেন।
সুবিল ইউনিয়ন’র সার ডিলার হাজী মোঃ শাহ আলম জানান, গত মাস পর্যন্ত পর্যাপ্ত সার থাকলেও চলতি মাসে সারের সরবরাহ কম ছিল। তাছাড়া বরাদ্ধকৃত সার কৃষকদের চাহিদার তুলনায় অনেক কম। আমরা কৃষি কর্মকর্তার সাথে আলোচনা সাপেক্ষে কৃষকদের চাহিদা পুরণে এবং সার সংকট নিরসনে ভর্তুকী দিয়ে সার কিনে সরবরাহ করে আসছি। ভর্তুকী দিয়ে কেনা সার ক্যাশ মেমোতে বিক্রি করা সম্ভব নয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রউফ বলেন, আমাদের দেশে কোন সার সংকট নেই। তবে ফেব্রুয়ারী মাসের সার বিলম্বে উত্তোলন হলে সংকট থাকতে পারে। এসব সার বিএডিসি, বিসিআইসি এবং আমদানীকারক থেকে সরবরাহ করতে হয়। বিএডিসি, বিসিআইসি’র সার কম সরবরাহ করলেও আমদানীকারকদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সরবরাহ করা যায়। বিভিন্ন এলাকার সার ডিলারগন যে পরিমান চাহিদার আবেদন করেন আমরা সে চাহিদা অনুযায়ী সার সরবরাহ করে থাকি। প্রতিটা সার ডিলারকে বলা আছে সালু কাপড়ে মূল্য তালিকা লিখে দোকানের সামনে ঝুলিয়ে রাখতে হবে এবং ক্যাশ মেমোর মাধ্যমে সার বিক্রি করতে হবে।
দেবীদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আশিক-উন-নবী তালুকদার বলেন, সার সংকট তৈরী করে যদি কেউ সুবিধা নিতে চায় কিংবা উচ্চমূল্যে সার বিক্রি করে থাকে এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। ইতিমধ্যে বিষয়টি অবগত হয়েছি, কৃষি অফিসারকে তদন্ত স্বাপেক্ষে রিপোর্ট করতে বলেছি।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।