লালপুরে শুরু হয়েছে ‘রাইস ট্রান্সপ্লান্টার’ মেশিনে ধানের চারা রোপণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: বুধবার ১৯শে জানুয়ারী ২০২২ ০৬:৪৮ অপরাহ্ন
লালপুরে শুরু হয়েছে ‘রাইস ট্রান্সপ্লান্টার’ মেশিনে ধানের চারা রোপণ

এই প্রথম নাটোরের লালপুরে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের মাধ্যমে ধানের চারা রোপন শুরু হয়েছে। কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার না করায় বাড়ছে কৃষি শ্রমিকের সংকট। বেশি অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যে কৃষি শ্রমিকরা ঝুঁকছে বিভিন্ন শিল্পকারখানায়। এ কারণে কৃষি খাতে ব্যাপক শ্রমিক সংকট দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে ধান রোপণ ও কাটার মৌসুমে শ্রমিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। 


এ সংকট মোকাবিলায় যন্ত্রের ব্যবহারও বাড়ছে সমান তালে। পাওয়ারট্রিলার ও ধান মাড়াই যন্ত্র বহুকালের পুরনো, কৃষি ক্ষেত্রে এ দুটি যন্ত্রের কোন বিকল্প নেই। তবে এরই মধ্যে নতুন হিসেবে ধান রোপনে পরিচিতি পেয়েছে ‘রাইস ট্রান্সপ্লান্টার’। অল্প সময়ে অধিক জমিতে স্বল্প ব্যয়ে কম বয়সী চারা লাগাতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের কোন জুড়ি নেই। 


যন্ত্রটিকে জনপ্রিয় করে তুলতে এবং কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে লালপুর উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্যোগে সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থাপনা মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকরণ প্রকল্পের আওতায় সমবায় পদ্ধতিতে ৬০ জন কৃষকের ১৫০ বিঘা জমিতে ‘রাইস ট্রান্সপ্লান্টার’ মেশিনের সাহায্যে ধানের চারা রোপন কর্মসূচি শুরু হয়েছে।


সকালে উপজেলার চংধুপইল ইউপির শোভগ্রামে কৃষি যান্ত্রিকরণ প্রকল্পের আওতায় সমবায় পদ্ধতিতে ‘রাইস ট্রান্সপ্লান্টার’ মেশিনের সাহায্যে ১৫০ বিঘা জমিতে চারা রোপণ করে এ মাঠ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার আরিফুজ্জামান। এসময় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মাহাদি হাসান, উপ-সহকারী কৃষি কর্র্মকর্তা আমিনুল ইসলাম, সালাউদ্দিন ও স্থানীয় কৃষকরা উপস্থিত ছিলেন। 


উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার আরিফুজ্জামান বলেন,‘কৃষি বিভাগের উদ্যোগে সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থাপনা মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকরণ প্রকল্পের আওতায় সমবায় পদ্ধতিতে এই প্রথম ‘রাইস ট্রান্সপ্লান্টার’ মেশিনের সাহায্যে ধানের চারা রোপন শুরু হয়েছে।


রাইস ট্রান্সপ্লান্টার’ মেশিন ব্যবহারের ফলে বীজ, শ্রম ও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদন ব্যয়ও কমবে। বাড়বে ধানের ফলন। সনাতন পদ্ধতিতে এক বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে শ্রমিক দিয়ে খরচ হয় ১৫শ থেকে ১৮শ টাকা। এতে করে কৃষকদের অধিক মজুরি গুনতে হয়। এক্ষেতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্র ব্যবহার করে এক বিঘা জমিতে ধান রোপন করতে মাত্র ৭শ টাকা খরচ হয়। 


চারা নষ্ট হওয়ার কোনো আশঙ্কাও থাকে না। এর মাধ্যমে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বিভিন্ন দূরত্বে ও গভীরতায় চারা রোপণ করা যায়। যন্ত্রটি ব্যবহার করতে জ্বালানি খরচও খুব কম, ঘণ্টায় মাত্র আধা লিটার পেট্রল প্রয়োজন পড়ে। এছাড়াও নিখুঁতভাবে নির্দিষ্ট পরিমাণে চারা রোপণ করার সুবিধা রয়েছে। যন্ত্রটি ব্যবহার করলে বীজতলার জন্যও আলাদা জমির প্রয়োজন হয় না। বাড়ির উঠানেই বীজতলা তৈরি করা সম্ভব। বৃষ্টির মধ্যেও খুব সহজে চারা রোপণ করা যায়। অত্যন্ত কম খরচ, শ্রম ও অল্প সময়ে অধিক জমিতে চারা লাগানো সম্ভব হওয়ায় যন্ত্রটির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে কৃষকরা।’



শোভ গ্রামের ধান চাষী শরিফুল ইসলাম, মাসুুদ রানা বলেন,‘শ্রমিক দ্বারা জমিতে ধানের চারা রোপণ যেখানে এক বিঘা জমিতে ১৫শ টাকা খরচ হয় সেখানে এই মেশিনের মাধ্যমে ধান রোপণ করলে খরচ হচ্ছে মাত্র ৭শ টাকা। এতে কম খরচে ধান রোপণ করে কৃষকরা আর্থিকভাবে সাশ্রয়ী এবং লাভবান হবেন। ’


লালপুর উপজেলা কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন,‘শ্রমিক সংকটসহ শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ার কারনে ধানের আবাদ করে কৃষকরা খুব একটা লাভবান হতে পারছে না। এজন্য সরকার কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে। মেশিনের মাধ্যমে ধান রোপণ ও মাড়াই করলে কৃষকরা অনেক লাভবান হবেন। মেশিন ক্রয়ে ক্ষেত্রে বর্তমান কৃষি বান্ধব সরকার হাওড় অঞ্চলে ৭০% এবং এই সকল অঞ্চলে ৫০% ভুর্তকি দিচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।’