ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং'র আঘাতে কৃষি ফসলের ক্ষতি; লোকসানের আশঙ্কা কৃষকদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
শফিউল আলম রাজীব, জেলা প্রতিনিধি কুমিল্লা
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২৫শে অক্টোবর ২০২২ ০৬:৫৮ অপরাহ্ন
ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং'র আঘাতে কৃষি ফসলের ক্ষতি; লোকসানের আশঙ্কা কৃষকদের

ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং'র আঘাতে কৃষি ফসলের ক্ষতি। লোকসানের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। কুমিল্লার দেবীদ্বারে সবুজ মাঠের ফসলি জমিতে কৃষকের আহাজারী চলছে। মঙ্গলবার সকালে বিভিন্ন এলাকার কৃষি মাঠ ঘুরে ওই চিত্র দেখা যায়। বিশেষ করে আগাম রবি ফসলের শাক-শব্জীর বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি আশংঙ্কা করছেন কৃষকরা। এছাড়াও সিত্রাং এর প্রভাবে বৈদ্যুতিক তারের খুটি, ফল-ফরাদী ও কাঠের বৃক্ষেরও ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে। পেপে, কলা, পানের বরজ, লাউ, কোমড়া, শষা, কালো বেগুন, করল্লাসহ বিভিন্ন সব্জীবাগানের ব্যপক ক্ষতি সাধন হয়েছে।


দেবীদ্বার পৌর এলাকার চাপানগর গ্রামের কৃষক কামরুল হাসান বলেন, আগাম রবি ফসলের ২৫ শতাংশ জমির বীজতলায় ফুলকপি, বাঁধাকপি, মরিচ, টমেটো, লাউ এর চারা উৎপন্ন করেছি। ২/১ দিনের মধ্যে চারাগুলো বিক্রি না করতে পারলে বিরাট ক্ষতির সম্মূখীন হতে হবো। সিত্রাং এর প্রভাবে বৃষ্টির কারনে মাঠ রবি ফসল বুনার উপযোগী হতে আরো ১৪/১৫দিন সময় লাগবে। এক ফসলা চারা উৎপাদনে সময় লাগে ১৫ থেকে ২৮দিন। এছাড়াও গত সপ্তাহে ৭ শতাংশ জমিতে ফুলকপি চারা বিক্রি করেছি প্রায় ১ লক্ষ টাকা, উৎপাদন ব্যয় হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। হিটলার টমেটোর ২ গ্রাম বীজ এনেছি ১২শত টাকায়, আবাদ করেছি ২৫ শতাংশ জমি, ফুল ধরা অবস্থায় সিত্রাং এর তান্ডবে তা গুড়িয়ে গেছে।


একই এলাকার কৃষক জাকির হোসেন জানান, চাপানগর গ্রামেই ৫০/৬০ জন কৃষক আছেন, এর মধ্যে ১৪/১৫ জন আছেন যারা বীজতলায় বিভিন্ন শাক-শব্জীর চারা উৎপাদন করে বিক্রি করেন। আমি ১০ শতাংশ জমিতে আগাম রবি ফসলের চারা উৎপাদন করে ৬০ হাজার টাকা আয় করেছি। আবারো ১৫ শতাংশ জমিতে চারা উৎপাদন করলেও সিত্রাং এর দূযোর্গে লক্ষাধিক টাকা লোকসান গুনতে হবে।

 

বিজলীপান্জার গ্রামের কৃষক অহিদুল ইসলাম বলেন, সাড়ে ৪ কানি জমিতে আউস ৪৯ ধান রোপন করেছি, ফুল আসার পরই ঝড়ে ফুলগুলো ফেলে দিয়েছে, ধান ভালো হবেনা, ৪০ শতক ফুলকপির চাষ এবং ১৫ শতাংশ জমিতে লাউ চাষ করলেও বৃষ্টি ও ঝড়ে গাছের ডগা এবং পাতাগুলো ভেঙ্গে গেছে।


উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, ধানের পরাগ উন্মোচন হয় দিনের ৯-১১টা পর্যন্ত। বিকেলে বা রাতের ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়না। কৃষকের ভয়ের কোন কারন নেই, পরাগের ফুল ঠিকই আছে।

 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রউফ বলেন, এবার খরিপ- রোপা আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ১১ হাজার ৯শত হেক্টর হলেও চাষ হয়েছে ১১ হাজার ৯৪০ হেক্টর এবং রবি ফসলের আগাম শাক-শব্জীর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৫ শত হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৪৭৫ হেক্টর। সিত্রাং এর ঝড়-বৃষ্টিতে প্রায় ২ হাজার হেক্টর খরিপ ও রবি ফসল আক্রান্ত হলেও আর বৃষ্টি না হলে ফসলের ক্ষতির পরিমাণ কমই হবে।