বরিশালে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আমনের বাম্পার ফলন, খুশি কৃষকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২৭শে ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:২৯ অপরাহ্ন
বরিশালে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আমনের বাম্পার ফলন, খুশি কৃষকরা

ধান, নদী ও খাল এই তিনে বরিশাল। চলতি মৌসুমে বরিশালসহ বিভাগের ছয় জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এবার আমনের বাম্পার ফলন হওয়ায় হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেয়েছে বরিশাল। পাশাপাশি এবছর ধানের দাম ভালো পাওয়ায় খুশি এ অঞ্চলের কৃষকরা। বরিশাল বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ হারুন-অর রশিদ জানিয়েছেন, বিভাগের ছয় জেলা পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠি, ভোলা ও বরিশালে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক ফসল উৎপাদন হয়েছে। 


তিনি আরও জানান, গত বছরের তুলনায় এবার বরিশাল জেলায় ৫৭ হেক্টর জমিতে ফসল বেশি হয়েছে। জেলায় মোট ১ লাখ ২৫ হাজার ৫৭ হেক্টর জমিতে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। অপরদিকে বরিশাল বিভাগে এবার ৬ লাখ ৬৭ হাজার মেট্রিক টন আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।


বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশালের অফিস সূত্রে জানা গেছে, করোনাকালীন সংকট মূহুর্তে সারাবিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি এ নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ইঞ্চি পরিমাণ জমিও ফাঁকা রাখতে নিষেধ করেছেন। এমতাবস্থায় বরিশাল বিভাগে চলতি বছর আমন, বোরো, আউশ এই তিন ফসল মিলিয়ে সাড়ে তিন লাখ মেট্টিক টন অতিরিক্ত চাল উৎপাদিত হয়েছে। 


সূত্রমতে, গত অর্থবছরে (২০১৯-২০) বরিশাল বিভাগে তিন ফসল মিলিয়ে চাল উৎপাদিত হয়েছিলো ২৮ লাখ মেট্টিক টন। কিন্তু সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে (২০২০-২০২১) তা বেড়ে হয়েছে ৩১ লাখ ৬৪ হাজার ৫৬৫ মেট্টিক টন। 


লবণাক্ততা, অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি ছাড়াও ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করে দক্ষিণাঞ্চলে গত কয়েক বছর ধরে খাদ্য উৎপাদনের অগ্রগতিতে খুশি কৃষি বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি সময়ে ভোলা ঘুরে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ভোলার কৃষকদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। বিশ্বব্যাপী যখন খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে, তখন বরিশালের কৃষকরা করোনা ও জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করে খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়ে চলেছেন। বিভাগের প্রায় এক কোটি জনগোষ্ঠীর জন্য বর্তমানে খাদ্যের চাহিদা ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৮ মেট্টিক টন। যা মিটিয়ে ১৫ লাখ মেট্টিক টনের বেশি খাদ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে।


বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বরিশালের ছয় জেলায় বোরো উৎপাদন হয়েছিলো ৫ লাখ ৪১ হাজার ৭৫৪ মেট্টিক টন। এরপর ২০২০-২১ অর্থবছরে বোরো চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিলো প্রতি হেক্টরে ৪ দশমিক ৩ মেট্টিক টন থেকে ৭ লাখ মেট্টিক টন। কিন্তু আবাদ বেশি এবং ফলন ভালো হওয়ায় এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে উৎপাদন হয়েছে ৭ লাখ ১৫ হাজার মেট্টিক টন চাল।


সূত্রমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরিশাল বিভাগে আমন, আউশ, বোরো মিলিয়ে প্রায় ২৭ লাখ মেট্টিক টন চালের উৎপাদন হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ধারাবাহিক ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের কারণে আমনে বেশ ক্ষতির পরেও আগের বছরের চেয়ে উৎপাদন ১ লাখ মেট্টিক টন বৃদ্ধি পেয়ে তিন মৌসুম মিলিয়ে বিভাগে প্রায় ২৮ লাখ মেট্টিক টন চাল উৎপাদন হয়েছিলো। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে সেই উৎপাদন সাড়ে ৩ লাখ মেট্টিক টনের বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ লাখ ৬৪ হাজার ৫৬৫ মেট্টিক টন। এরমধ্যে চলতি বছর বিভাগে আমন উৎপাদন হয়েছে ১৭ লাখ ৯৪ হাজার ৩৭০ মেট্টিক টন, আউশ ৬ লাখ ৫৫ হাজার ৬১৫ মেট্টিক টন এবং বোরো ৭ লাখ ১৪ হাজার ৮১৩ মেট্টিক টন।


বরিশাল সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. কবির হোসেন বলেন, প্রতিকূলতা পেরিয়ে বরিশাল অঞ্চলে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এবার আমন ধানের উৎপাদন হয়েছে।


বরিশাল বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. হারুন-অর রশিদ বলেন, বাংলার শস্যভান্ডার হিসেবে বরিশাল অঞ্চলের পুরনো খ্যাতি আবার ফিরতে শুরু করেছে। গত টানা তিন বছর এ অঞ্চলের চাল ও অন্য শস্যের উৎপাদন বেড়েই চলেছে। কৃষকদের প্রচেষ্টা এবং কৃষি বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগ, নতুন নতুন প্রযুক্তির সম্প্রসারণ, সুবিধা ও সরকারের প্রণোদনা বৃদ্ধির কারণেই এ সাফল্য অর্জিত হচ্ছে বলেও তিনি জানান।