রাজবাড়ীতে সোনালী আঁশ পাট এবার ভিন্ন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে কৃষকের কাছে। তবে শুধু আঁশ নয়, পাটকাঠিতেও দেখাচ্ছে আশার আলো। বছর কয়েক আগেও পাটের দুর্দিন গেলেও এবার পাটের সুদিন ফিরেছে। কারণ পাটের আর কোনো কিছুই মূল্যহীন নয়। এক সময় পাটকাঠি ফেলে দেয়া হতো। কখনো রান্নার জ্বালানি, ঘরের বেড়া তৈরিতে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু এখন বিশ্ববাজারে পাটকাঠির চাহিদা বেড়েছে। তাইতো এই অঞ্চলের কৃষক সোনালী আঁশের রুপালী কাঠিতে আশার আলো দেখছে। বিগত সময় পাট চাষীরা চাহিদা অনুযায়ী পাটের দাম না পেয়ে এই মৌসুমে সোনালি আঁশে ও কাঠিতে তা পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন।
রাজবাড়ী জেলার সদর উপজেলা,পাংশা,কালুখালী, বালিয়াকান্দি, গোয়ালন্দসহ জেলার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পাট পানিতে জাগ দিয়ে আঁশ ছাড়িয়ে নিয়ে বাজারে বিক্রি করে ফেলেছে। এখন চলছে পাট কাঠি শুকানোর কাজ। গ্রামীন সড়কের দুই পাশে পাটকাঠি সাড়ি সাড়ি রেখে দিয়েছে অনেকই। আবার অনেক স্থানে দেখা গেছে পাঠ কাঠি শুকানো শেষ হলে অনেক কৃষক বাড়ির আঙ্গিনায় স্তুপ করে রেখে দিচ্ছে। অনেকেই আবার বিক্রি করে দিচ্ছে। এসব পাট কাঠি পানের বরজ, ক্ষেতের চারপাশে বেড়া দেওয়া, গরুর ঘর, রান্না ঘরে বেড়া দেওয়া, জ্বালানিসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হলেও ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজবাড়ীতে পাটের চাষ হয়েছে ৪৯ হাজার ৮২২ হেক্টর জমিতে। যা গত বারের তুলনায় ১ হাজার ৮০২ হেক্টর বেশী। এছাড়া এবার পাট উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ৫ লাখ ৮০ হাজার ২০০ বেল হলেও এখন পর্যন্ত পাটের উৎপাদন হয়েছে ৬ লাখ ২০ হাজার ২২ বেল। যা গত বারের তুলনায় ৩৯ হাজার ৮২২ বেল বেশী।
বালিয়াকান্দি উপজেলার মোল্লা পাড়া গ্রামের কৃষক হাসেম শেখ বলেন, এলাকার একটি পুকুরে জমির পাট কেটে জাগ দিয়েছিলাম। অল্প পানিতে পাট জাগ দেওয়ায় পাটের রং ভালে হয নাই। তারপরও ভালো দামে বিক্রি করতে পেরেছি। এখন পাট কাঠি শুকানোর কাজ করছি। কিছু পাট কাঠি নিজের প্রয়োজনের জন্য বাড়িতে স্তুপ করে রেখেছি। বাকি পাটকাঠি বিক্রি করে দিয়েছি। ২শত আটি পাটকাঠি ১৫শ টাকায় বিক্রি করেছি।
গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের চরকর্নেশন এলাকার সালাম ব্যাপারীসহ আরো চাষিরা জানান, শুধু পাট বিক্রয় করেই নয় এবার পাটের এই কাঠিও আমাদের আশা জাগিয়েছে। এখন পাটকাঠি বিক্রি করে ভালো দাম পাচ্ছি। পাটকাঠি হলো কৃষকদের জন্য বাড়তি লাভ। একশত আটি পাটকাঠি ৬শ থেকে ৭শ টাকায় বিক্রি করতে পারছি।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস এম শহীদ নূর আকবর বলেন, জনমানুষের মন্তব্য হলো পাট চাষিদের জন্য সরকারের বিশেষ আর্থিক প্রণোদনাসহ নানাবিধ উদ্যোগেই পাটের বাজারের এমন উন্নতি। আর বেশি পাঠ চাষ হওয়াতে জেলাজুড়ে পাঠের পাশাপাশি বেড়েছে পাঠকাঠিও। পাট এবং পাট কাঠির ভালো দাম পাওয়ার কারণে প্রতি বছরই রাজবাড়ী জেলায় পাটের আবাদ বাড়ছে। এ বছর পাটে বাম্পার ফলন পেয়েছে কৃষকেরা। বৃষ্টি না থাকায় পানির অভাবে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে কৃষকদের কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।