আষাঢ় শ্রাবণ শেষ হলেও বৃষ্টির দেখা মিলছিলই না। অবশেষে গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে সাধারণ মানুষ ভোগান্তি পোহালেও যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে দখিনের ৬ জেলার কৃষকরা। কেননা বৃষ্টির অভাবে আমন ধানের চারা রোপণ করা যাচ্ছিল না। সেচ দিয়ে আমন চারা রোপণ শুরু করলেও গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে মাঠে মাঠে আমনের চারা রোপণের ধুম পড়েছে।
চলতি মৌসুমে দখিনের ৬ জেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৭ লাখ হেক্টর জমিতে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে লক্ষ্যমাত্রার শতকরা ৪০ ভাগ জমিতে আমন আবাদ হয়েছে।
তবে সার ও ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিতে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা। সার ও তেলের মূল্য কমানো না হলে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি খাত ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে জ¦ালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে দখিনের ৬ জেলায় কোনো প্রভাব পড়বে না বলছে কৃষি কর্মকর্তারা। কেননা দখিনের জেলাগুলোতে সেচের জন্য পাম্প চালানোর প্রয়োজন হয় না বলে জানান তারা।
বরিশাল বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্ত সূত্রে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে বিভাগের ৬ জেলায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৯৪ হাজার ৯৬৩ হেক্টর জমি। এর মধ্যে বরিশালে ১ লাখ ২৫ হাজার হেক্টর, পিরোজপুরে ৬১ হাজার ৭০০ হেক্টর, ভোলায় ১ লাখ ৭১ হাজার ৪০০ হেক্টর, ঝালকাঠিতে ৪৮ হাজার হেক্টর, বরগুনায় ৯ লাখ ৮ হাজার ৯৪০ হেক্টর এবং পটুয়াখালীতে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯২৩ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২৩ আগস্ট পর্যন্ত ২ লাখ ৭৪ হাজার ৫৪৭ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। যা মোট লক্ষ্যমাত্রা শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ। আসছে আমাবস্যার জ্যো কেটে গেলে পুরোদমে আমন আবাদ শুরু হবে বলে আশা করছে কৃষি কর্মকর্তারা।
এদিকে চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির অযুহাতে সরকার ১ আগস্ট থেকে ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ছয় টাকা বৃদ্ধি করেছে। ডিলার পর্যায়ে ইউরিয়া সারের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ১৪ থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা এবং কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি ১৬ থেকে বাড়িয়ে ২২ টাকা পুনঃনির্ধারণ করেছে। হঠাৎ করে ইউরিয়া সার ও তেলের মূল্য বৃদ্ধি করায় চলতি আমন মৌসুমে চাষাবাদ নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে দখিনের কৃষকরা।
উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের কৃষক সোহরাব হাওলাদার বলেন, এ বছর বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। তাই আমন ধান আবাদ হয়ে গেছে অনেকটা সেচ নির্ভর। স্যালো ইঞ্জিন দিয়ে জমিতে সেচ এবং ট্রাক্টর দিতে চাষাবাদ করতে গিয়ে কৃষকের খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নের কৃষক জহির মোল্লা বলেন, খড়ার কারণে অনেক বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে।
তবে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে মাটি ভিজে যাওয়ায় নতুন করে বীজতলা তৈরি করেছেন কৃষকরা। তিনি বলেন, জ¦ালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে বাজারমূল্য ঊর্ধ্বগতি হওয়ায় শ্রমিকদের মজুরি বেড়ে গেছে। ফলে কৃষিকাজে খরচও বাড়ছে। বাকেরগঞ্জ উপজেলার পাদ্রিশিবপুর ইউনিয়নের কৃষক কাদের হাওলাদার বলেন, আষাঢ়ের শেষ ও শ্রাবণ মাসের প্রথম সপ্তাহে আমরা হালচাষ দিয়ে জমি তৈরি করে ধান লাগাতাম। কিন্তু আষাঢ় শ্রাবণ মাসে সময় মতো প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং প্রচণ্ড খরার কারণে এখনো অনেক জমি পতিত পড়ে আছে।
বৃষ্টি হলেই আমন চাষে এবং রোপণকৃত ধানের পরিচর্যা কাজে ফিরতে পারলেই কৃষকের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত হৃদয়েশ্বর দত্ত জানান, বর্তমান সরকারের যুগোপযোগী উদ্যোগের কারণে একদিকে কৃষিখাতে যান্ত্রীকরণ হচ্ছে, অন্যদিকে কৃষকরা এর নানা সুফল ভোগ করছে।
মঙ্গলবার পর্যন্ত বিভাগের ৬ জেলায় ২ লাখ ৭৪ হাজার ৫ শত ৪৭ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে ভালোই বৃষ্টি হয়েছে। আরো বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সামনের আমাবস্যার কারণে কৃষকরা অপেক্ষা করছেন। এরপরই পুরোদমে আমন আবাদ শুরু করবেন কৃষকরা। মাঠ পর্যায়ের সব ব্লক সুপারভাইজারদের কৃষকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও পরামর্শ প্রদানের নির্দেশ প্রদানের কথাও জানান অতিরিক্ত পরিচালক।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।