সার ও জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে দিশেহারা নেত্রকোনার কৃষকরা। তার উপর তীব্র খরায় আমন ক্ষেত ফেটে চৌচির এবং রোদে পুড়ে ধানের চারা বিবর্ণ হয়ে পড়ায় জেলায় রোপা অমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
নেত্রকোনা জেলা মূলত কৃষি নির্ভর জেলা। সার, ডিজেল ও তীব্র খরার কারণে এই জেলার অর্থনীতির মূল ভিত্তি কৃষিতে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। আমন ধান চাষাবাদ নিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছেন কৃষকরা। সার ও তেলের মূল্য কমানো না হলে কৃষি খাত ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।
নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্ত সূত্রে জানা যায়, চলতি রোপা আমন মওসুমে নেত্রকোনা জেলায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লক্ষ ৩২ হাজার ৫ শত ৮০ হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লক্ষ ৬২ হাজার ৫ শত ৯৬ মেট্রিক টন।
চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির অযুহাতে সরকার ১ আগস্ট থেকে ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ছয় টাকা বৃদ্ধি করেছে। ডিলার পর্যায়ে ইউরিয়া সারের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ১৪ থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা এবং কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি ১৬ থেকে বাড়িয়ে ২২ টাকা পুনঃনির্ধারণ করেছে। হঠাৎ করে ইউরিয়া সার ও তেলের মূল্য বৃদ্ধি করায় চলতি আমন মওসুমে চাষাবাদ নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে নেত্রকোনার কৃষকরা।
নেত্রকোনা জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সময়ের সাথে সাথে কৃষিখাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। চাষাবাদ এখন অনেকটাই যন্ত্রনির্ভর হয়ে পড়েছে। ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষাবাদের পাশাপাশি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা এবং হ্যান্ডট্রলি দিয়ে তা বাড়িতে আনা হচ্ছে। সার, ডিজেল ও জ¦ালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধি মানে জমি চাষাবাদ, ধানের চারা রোপন, ধান কর্তন এবং তা ঘরে তোলা এবং বাজারজাত করা পর্যন্ত সর্বত্র বাড়তি দামের প্রভাব পড়বে।
কেন্দুয়া উপজেলার চিরাং ইউনিয়নের দুল্লী গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বলেন, এ বছর বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। তাই আমন ধান আবাদ হয়ে গেছে অনেকটা সেচ নির্ভর। স্যালো ইঞ্জিন দিয়ে জমিতে সেচ এবং ট্রাক্টর দিতে চাষাবাদ করতে গিয়ে কৃষকের খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে।
আটপাড়া উপজেলার স্বরমুশিয়া ইউনিয়নের রূপচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক আকিকুর রেজা খোকন বলেন, আগে এক কাটা জমি ট্রাক্টর দিয়ে চাষাবাদ করতে যেখানে লাগতো ২ শত টাকা। তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন সেই জমি চাষ করতে লাগছে সাড়ে ৩ শত টাকা।
নেত্রকোনা সদর উপজেলার সিংহের বাংলা ইউনিয়নের ফরিদপুর গ্রামের কৃষক আল আমিন বলেন, আষাড়ের শেষ ও শ্রাবণ মাসের প্রথম সপ্তাহে আমরা হালচাষ দিয়ে জমি তৈরী করে ধান লাগাতাম। কিন্তু আষাড় শ্রাবণ মাসে সময় মতো প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং প্রচন্ড খরার কারণে এখনও অনেক জমি পতিত পড়ে আছে।
পূর্বধলা উপজেলার দুলচাপুর গ্রামের কৃষক সবুজ বলেন, প্রচন্ড খরায় জমি ফেটে চৌচির হয়ে ধানের চারা বিবর্ণ হয়ে পড়েছে। একটু বৃষ্টির অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন কৃষকরা। লাগানো জমিতে ধান বাঁচাতে মহা দুশ্চিন্তায় পড়েছে কৃষকরা। একটু বৃষ্টি হলেই আমন চাষে এবং রোপন ধানের পরিচর্যা কাজে পিরতে পারলেই কৃষকের মাঝে স্বস্থি ফিরে আসবে। বৃষ্টির দিকে চেয়ে আছে মানুষসহ প্রাণীকুল।
কৃষিবিদ দিলীপ সেন বলেন, হঠাৎ করে সার ডিজেল ও তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষকের বাড়তি খরচের ধকল সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শ্রমিক সংকট ও শ্রমিকের দিন মজুরি বৃদ্ধিও তাদেরকে ভোগাচ্ছে। এখন সার ডিজেল ও তেলের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে এবং খরার কারণে কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান জানান, বর্তমান সরকারের যুগোপযোগী উদ্যোগের কারণে একদিকে কৃষিখাতে যান্ত্রীকরণ হচ্ছে, অপরদিকে কৃষকরা এর নানা সুফল ভোগ করছে। বুধবার পর্যন্ত নেত্রকোনা জেলায় ৯৪ হাজার ৫ শত ২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। মঙ্গলবার ভোর রাতে ভালই বৃষ্টি হয়েছে। আরো বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।