মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন, যা ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, এখন দেশের অন্যতম বৃহত্তম বন্যপ্রাণী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। সীতেশ রঞ্জন দেবের প্রতিষ্ঠিত এই ফাউন্ডেশন গত কয়েক বছরে অনেকটাই পরিবর্তিত হয়েছে। এখানে আশ্রিত বন্যপ্রাণী সংখ্যা বেড়ে চলেছে এবং প্রায় প্রতিটি প্রাণীই নতুন প্রজন্মে জন্ম দিয়েছে। ফাউন্ডেশনে প্রায়শই নতুন বাচ্চা জন্ম নিচ্ছে। চলতি বছরের ২ এপ্রিল ভোরে এখানে একটি চিতা বিড়াল বাচ্চা জন্ম নিয়েছে। এর আগেও ৩০ মার্চ একটি চিত্রল হরিণের বাচ্চা প্রসব করেছে।
এছাড়া, দুর্লভ প্রজাতির প্রাণী যেমন লজ্জাবতী বানর, বেগুনি কালেম, অজগর, গন্ধ-গোকুলসহ নানা প্রজাতির প্রাণী তাদের কোলাহলমুক্ত পরিবেশে নতুন জীবন শুরু করেছে। ফাউন্ডেশনের বিশেষত্ব হলো, এটি কোনো চিড়িয়াখানা নয়, এটি একটি ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত বন্যপ্রাণী আশ্রয়কেন্দ্র যা বর্তমানে পুরোপুরি প্রাকৃতিক পরিবেশে বন্যপ্রাণীদের জীবনযাপন নিশ্চিত করছে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে প্রতিষ্ঠিত এই কেন্দ্রটির শুরু হয়েছিল সীতেশ রঞ্জন দেবের ব্যক্তিগত উদ্যোগে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আশ্রয়কেন্দ্রটি ধ্বংস হয়ে যায়, তবে ১৯৭২ সালে পুনরায় এটি চালু করা হয়। বর্তমানে এটি সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা নামে পরিচিত হলেও প্রকৃত নাম বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন। এখানকার প্রাণীদের মধ্যে মেছো বিড়াল, ভল্লুক, ইমু পাখি, মায়া হরিণ, চিত্রা হরিণসহ প্রায় ৫০টি প্রজাতির বন্যপ্রাণী রয়েছে।
এই ফাউন্ডেশনটি শুধুমাত্র বন্যপ্রাণীদের আশ্রয় দেয় না, বরং আহত বা বিপদগ্রস্ত বন্যপ্রাণীদের উদ্ধারও করে এবং সুস্থ করে পুনরায় বনাঞ্চলে মুক্ত করে দেয়। ২০১২ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত সংগঠনটি ৬৫২টি বন্যপ্রাণী উদ্ধার করে বন বিভাগে হস্তান্তর করেছে, এর মধ্যে অজগর সাপ, লজ্জাবতী বানর, মেছো বিড়াল, সোনালি বিড়ালসহ নানা প্রজাতির প্রাণী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
প্রতিবছর বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় দিবসগুলিতে, বিশেষ করে বিজয় দিবস এবং স্বাধীনতা দিবসে, এরা নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী বনাঞ্চলে অবমুক্ত করে। বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক স্বপন দেব সজল জানান, তারা বন্যপ্রাণীকে সুস্থ করে বনে ফিরিয়ে দেয়, তবে কিছু প্রাণী বনে ফিরে যেতে না পারলে সেগুলো এখানে যত্নসহকারে রাখা হয়। বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক জামিল মোহাম্মদ খান বলেন, ফাউন্ডেশন থেকে অবমুক্ত করা বন্যপ্রাণী লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করা হয়েছে।