বাংলাদেশ-পাকিস্তান নিরাপত্তা সম্পর্ক শক্তিশালী করতে নতুন উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ১৬ই জানুয়ারী ২০২৫ ১২:২৩ অপরাহ্ন
বাংলাদেশ-পাকিস্তান নিরাপত্তা সম্পর্ক শক্তিশালী করতে নতুন উদ্যোগ

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সম্পর্ক আরও উন্নত করতে একটি শক্তিশালী নিরাপত্তা জোট গঠনের পরিকল্পনা করেছে পাকিস্তান। দুই দেশের সামরিক নেতৃত্বের সাম্প্রতিক বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর জনসংযোগ বিভাগ (আইএসপিআর) জানিয়েছে, গত ১৫ জানুয়ারি পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে জানানো হয় যে পাকিস্তান বাংলাদেশকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার জন্য একটি শক্তিশালী জোট গঠনের জন্য আগ্রহী।


১৪ জানুয়ারি, রাওয়ালপিন্ডির সেনা সদরদপ্তরে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান। বৈঠকে দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং দুই দেশের সামরিক সম্পর্কের উন্নয়ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। উভয়পক্ষই দুদেশের সম্পর্ককে ভ্রাতৃপ্রতিম হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং বহিরাগত প্রভাব সত্ত্বেও সম্পর্ক দৃঢ় রাখার প্রয়োজনীয়তা জোর দিয়েছেন।


এই বৈঠকে উভয়পক্ষের মধ্যে আরও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে কীভাবে তারা আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একসাথে কাজ করতে পারে। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের যৌথ প্রচেষ্টা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বিশেষ করে, আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা উদ্বেগের মোকাবিলায় তারা একে অপরের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার বিষয়ে একমত হয়েছেন।


পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে তথ্য বিনিময় এবং যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ানোর পরিকল্পনাও ওঠে এসেছে। উভয় দেশের উচ্চপর্যায়ের সামরিক নেতৃত্ব এমন একটি জোট গঠনের পরিকল্পনা করেছে, যা শুধু নিরাপত্তা দিক থেকে নয়, আঞ্চলিক শান্তি রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।


উল্লেখযোগ্য যে, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক তেমনভাবে শক্তিশালী ছিল না, বিশেষ করে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখার কারণে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে, বিশেষ করে বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের পরিবর্তনের পর। গত বছর ৫ আগস্ট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন হয়। এর ফলে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন মোড় নেয় এবং উভয় দেশ নিজেদের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করছে।


এদিকে, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপিত হয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার পর দুদেশের মধ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানি এবং জাহাজ চলাচল আবারও শুরু হয়েছে। উভয় পক্ষই এই ধরনের সহযোগিতা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধির বিষয়ে আশাবাদী।


যদিও কিছু সময় আগেও দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ব্যাপক উন্নতি দেখা যায়নি, তবে সাম্প্রতিক সামরিক ও কূটনৈতিক অগ্রগতির ফলে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে। বিশেষ করে এই সম্পর্ক আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তায় একটি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে, যা কেবলমাত্র উভয় দেশের জন্যই নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।


এই সাম্প্রতিক আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে নিরাপত্তা সম্পর্কের নতুন দিগন্ত খুলে গেলো, এবং তা শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সহায়ক হবে এমনটাই আশা করা হচ্ছে। উভয় দেশই চায় একটি স্থিতিশীল এবং শান্তিপূর্ণ আঞ্চলিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে, যেখানে তারা একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবে।