সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানকে মধ্যরাতে ঘরের দরজা ভেঙে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতনের অভিযোগে সমালোচিত কুড়িগ্রামের তৎকালীন রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) নাজিম উদ্দিনকে কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। এই পদায়ন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে প্রশাসনিক মহল ও সংবাদমাধ্যমে।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার কাউছার হামিদ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে নাজিম উদ্দিনকে ইটনার ইউএনও হিসেবে পদায়ন করার ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রজ্ঞাপনটি ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে, যা সামাজিক এবং সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ২০২০ সালে কুড়িগ্রামে দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানকে বেআইনিভাবে তুলে নিয়ে গিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। ওই সময় আরিফুলের বিরুদ্ধে মাদক রাখার মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাকে রাতের আঁধারে গ্রেপ্তার করা হয়। আরিফুলের দাবি ছিল, তার সাংবাদিকতা এবং প্রশাসনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে রিপোর্টিংয়ের কারণেই তাকে হয়রানি করা হয়েছিল। আরিফুলের গ্রেপ্তারের ঘটনাটি দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল এবং বিভিন্ন মহল থেকে নাজিম উদ্দিনের কঠোর শাস্তির দাবি উঠেছিল।
তবে সেই ঘটনার পরও নাজিম উদ্দিনের এই পদোন্নতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নাজিম উদ্দিনকে ইটনা উপজেলার ইউএনও হিসেবে পদায়ন করা হলে, সাধারণ জনগণ এবং বিশেষজ্ঞ মহলে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা এই পদায়নকে প্রশাসনিক অবহেলা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
একজন প্রভাবশালী মানবাধিকার কর্মী জানান, “এই ধরনের একটি ঘটনায় অভিযুক্ত একজন কর্মকর্তাকে ইউএনও হিসেবে পদায়ন করা হলে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশাসনের প্রতি আস্থা কমে যাবে। এটা প্রশাসনের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি করবে এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা আরও বাড়াতে পারে।”
অন্যদিকে, প্রশাসনিক মহলে এই পদায়নকে একটি সাধারণ প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। এক কর্মকর্তা জানান, “প্রশাসনে পদায়ন এবং পদোন্নতি একটি চলমান প্রক্রিয়া। অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও একজন কর্মকর্তার বিচারাধীন মামলা বা তদন্ত চলমান থাকলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া যেতে পারে।"
এদিকে সাংবাদিক মহল থেকে নাজিম উদ্দিনের পদোন্নতির বিষয়ে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। আরিফুল ইসলাম রিগান ও তার সহকর্মীরা দাবি করেছেন যে, এই ধরনের পদক্ষেপ সাংবাদিকদের স্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচারের প্রতি একটি বড় আঘাত।
এই পদায়ন নিয়ে বিতর্ক ও প্রতিক্রিয়া যেমনই হোক না কেন, এটি প্রমাণ করে যে দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচারের জন্য এখনও অনেক কিছু করতে হবে। নাজিম উদ্দিনের এই পদায়ন সরকার এবং প্রশাসনের ওপর জনগণের আস্থা কতটা টেকসই হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।