রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া তোরাপ শেখের পাড়া-যদু ফকির পাড়া এলাকায় নির্মাণাধীন রাস্তার কাজের ধীরগতির কারণে স্থানীয় জনগণ দীর্ঘদিন ধরে চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন। সাধারণ চলাচল, রোগীদের আনা-নেয়া, কৃষি ফসল বাজারে নেয়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন এলাকাবাসী। এ অবস্থায় গত মঙ্গলবার স্থানীয়রা মানববন্ধন করে দ্রুত রাস্তাটি যান চলাচলের উপযোগী করার দাবি জানিয়েছেন।
গোয়ালন্দ উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাকির হোসেন মিঞা জানান, রাস্তাটির কাজের মাত্র ৩০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। কাজের গতি অত্যন্ত ধীর। পুরোনো রাস্তার উপর থেকে ইট তুলে ফেলে বালি বিছিয়ে দেয়ায় বর্তমানে সেখানে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। এতে করে জনসাধারণের নানা ধরনের ভোগান্তি হচ্ছে বলে তার নিকট অভিযোগ এসেছে। তিনি আরও জানান, কাজের গতি বাড়িয়ে দ্রুত যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সতর্কতা মূলক একটি পত্র দিয়েছেন।
উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সংলগ্ন সড়ক হতে উজানচর জিসি ভায়া ফকির পাড়া সড়কটির ২ হাজার ৬৮৫ মিটার বিটুমিনাস কার্পেটিং কাজ করার জন্য চুয়াডাঙ্গার জাকাউল্লাহ এন্ড ব্রাদার্স প্রতিষ্ঠানটি কার্যাদেশ পায়। ২টি বক্স কালভার্টসহ সড়কটি নির্মাণের চুক্তিমূল্য ৩ কোটি ৭৪ লক্ষ ৭ হাজার ২৫৪ টাকা। গত ১৮ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে কাজ শুরু হয়ে আগামি ১৬ মে ২০২৫ তারিখের মধ্যে কাজটি শেষ করার কথা রয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটির কাজের ধীরগতির কারণে তা যথাসময়ে সম্পন্ন না হওয়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
সরেজমিন বৃহস্পতিবার আলাপকালে স্থানীয় তোরাপ শেখের পাড়ার কৃষক হুমায়ন আহমেদ, বারেক বেপারী, কুদ্দুস শেখসহ কয়েকজন বলেন, তাদের এলাকায় প্রচুর পরিমাণে পেয়াজ, রসুন, কুমড়োসহ নানা ধরনের ফসলের আবাদ হয়েছে। এ সকল ফসলের খুব সামান্য কিছু অনেক কষ্ট করে ঘোড়ার গাড়িতে ঠেলে বাজারে নেয়া যাচ্ছে। তারা জানান, ঘোড়ার গাড়িতে প্রতি মণ পেয়াজ নিতে ১০০ টাকা করে ভাড়া দিতে হচ্ছে। আগে লাগত মাত্র ৩০ টাকা। এ অবস্থায় উত্তোলন খরচ ও পরিবহন খরচের পেছনে পেয়াজ বিক্রির অধিকাংশ টাকাই ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। এভাবে তারা লোকসানের মুখে পড়ছেন। অনেকের পাকা পেয়াজ মাঠেই নষ্ট হচ্ছে।
যদু ফকির পাড়ার কৃষক হারুন বেপারি বলেন, তিনি এবার ৩ বিঘা জমিতে পেয়াজ লাগিয়েছেন। এতে তার অন্তত ২৭০-২৮০ মণ ফলনের আশা রয়েছে। মাঠের সব পেয়াজ ইতিমধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে পেকে গেছে। কিন্তু রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণে পেয়াজ ঠিক মতো বাজারে নিতে পারছেন না। মাথায় করে আর কয় মণ পেয়াজ বাজারে নেয়া যায় বলে তিনি প্রশ্ন তোলেন।
গর্ভবতী গৃহবধূ সুমী আক্তার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, তার স্বামী ঢাকায় চাকরি করেন। তাকেই নিয়মিত বাজারে গিয়ে সংসারের কেনাকাটা করতে হয়। বর্তমানে বালুর মধ্য দিয়ে চলাচলে অনেক কষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া রাত-বিরাতে কখন কোন বিপদ হয়ে যায় বুঝতে পারছি না। রাস্তাটা ভালো থাকলে তেমন একটা ভয় পেতাম না। রাস্তার বালুর মধ্য দিয়ে সাধারণ রোগীদের চলাচলেও বর্তমানে খুবই কষ্ট হচ্ছে বলে তিনি জানান।
গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক মোঃ খোকন উজ্জামান বলেন, ওই এলাকার সাধারণ কৃষক ও জনসাধারণের দুর্ভোগের বিষয়টি তিনি উপজেলা প্রকৌশলী ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে জানিয়ে দ্রুত কাজটি সম্পন্নের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
ঠিকাদারের প্রতিনিধি মোঃ সালাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মানুষের কষ্ট হচ্ছে এটা সত্য। তবে বেশি তাড়াহুড়ো করে কাজ করলে মান খারাপ হতে পারে। তাছাড়া বালু রুলিং করার জন্য রোলার মেশিন জোগাড় করতে সমস্যা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কাজের গতি বাড়ানোর জন্য তারা চেষ্টা করছেন এবং আশা করছেন শীঘ্রই সমস্যার সমাধান হবে।
এলাকাবাসীর দাবি, রাস্তার কাজ দ্রুত শেষ করে তাদের ভোগান্তি লাঘব করা হোক। তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যার মধ্যে থাকায় তাদের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে কৃষকরা তাদের ফসল নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। অনেকের ফসল মাঠেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যা তাদের জন্য বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাদের অনুরোধ, যত দ্রুত সম্ভব রাস্তার কাজ শেষ করে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ লাঘব করা হোক। তারা আশা করছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন এবং রাস্তার কাজ সম্পন্ন করে এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।