বাউফলে অটোচালক হত্যায় দুইজন গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক
রাকিবুল ইসলাম তনু, জেলা প্রতিনিধি পটুয়াখালী
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২৮শে জানুয়ারী ২০২৫ ০৮:১০ অপরাহ্ন
বাউফলে অটোচালক হত্যায় দুইজন গ্রেপ্তার

পটুয়াখালীর বাউফলে অটোচালক সুজন হাওলাদার (৩৫) হত্যার ঘটনায় পুলিশ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বাউফল থানার পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। গ্রেপ্তার হওয়া দুইজনের নাম এনামুল ইসলাম (৩০) ও জিহাদ মুন্সী (২৫)। এনামুল কনকদিয়া ইউনিয়নের বারেক সিপাহির ছেলে এবং জিহাদ মুন্সী একই ইউনিয়নের সাত্তার মুন্সীর ছেলে। এনামুল কনকদিয়া ইউনিয়ন জিয়া মঞ্চের আহ্বায়ক এবং জিহাদ মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে পরিচিত।  


এ ঘটনায় পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার (২৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় কনকদিয়া বীরপাশা বাজার এলাকায় উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মূনঈমুল ইসলাম মিরাজের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন অটোরিকশাচালক সুজন হাওলাদারকে কুপিয়ে হত্যা করে। ঘটনার পরপরই নিহত সুজনের বাবা নবী আলী হাওলাদার বাউফল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ২০ জন নামীয় এবং কয়েকজন অজ্ঞাত আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।  


বাউফল থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) আতিকুর রহমান জানান, গ্রেপ্তার হওয়া জিহাদ মুন্সী ও এনামুল ইসলাম মামলার ১১ ও ১৪ নম্বর আসামি। পুলিশ তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করছে এবং অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রেখেছে।  


পুলিশের দাবি, ঘটনার সময় স্থানীয় ছাত্রদলের নেতা মূনঈমুল ইসলাম মিরাজের নেতৃত্বে অটোচালকদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয় এবং এর পরেই সুজন হাওলাদারকে হত্যা করা হয়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ওই সময় হত্যাকারীরা সুজনকে ব্যাপকভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। তারা আরো জানান, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক শত্রুতা থাকতে পারে, তবে পুলিশ এখনও তদন্ত চালাচ্ছে।  


এদিকে, হত্যার পর বাউফল থানায় গ্রেপ্তার হওয়া দুইজনকে পুলিশ remand চেয়ে আদালতে আবেদন করবে বলে জানিয়েছে। পুলিশ অপর আসামিদের খোঁজে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে এবং আশা করা হচ্ছে খুব শিগগিরই বাকিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।  


এ ঘটনার পর এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। একে অপরকে দোষারোপ করছে এবং বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। এর ফলে এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ বেশ কিছু নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।  


এ হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও সমাজসেবীরা দ্রুত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তারা আশা করছেন, পুলিশ দ্রুত হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনবে।  


এদিকে, নিহত সুজন হাওলাদারের পরিবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং তাদের অভিযোগ, সুজন হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তারা প্রশাসনের সাহায্য কামনা করছেন। তারা বলছেন, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।  


এছাড়া, স্থানীয় কিছু নেতারা দাবি করেছেন, হত্যাকাণ্ডটি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক শত্রুতা বা সংঘর্ষের ফলস্বরূপ হতে পারে, তবে এখন পর্যন্ত পুলিশ এই বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলেনি। তারা তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত সঠিক কারণ উদঘাটন করবে বলে জানিয়েছে।  


বাউফল থানা পুলিশ এখন পর্যন্ত যে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে, তারা সকলেই স্থানীয় ছাত্রদলের নেতা হিসেবে পরিচিত। তাদের গ্রেপ্তারের পর আরো অনেক তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করছে পুলিশ। তবে, এখনো এই হত্যা মামলার রহস্য পুরোপুরি উদঘাটন হয়নি, এবং আগামী দিনে আরো তদন্তের মাধ্যমে আরও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।  


পুলিশের কাছে এই হত্যাকাণ্ডের সাথে আরও কেউ জড়িত কিনা, সে বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। তাছাড়া, ঘটনার পর এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে পুলিশ অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।  


এই হত্যাকাণ্ডের পর পুরো এলাকায় একটি শোকের আবহ বিরাজ করছে। সুজন হাওলাদারের মৃত্যুতে তার পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে, এবং এলাকাবাসী তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছেন। তাদের আশা, হত্যাকারীদের শাস্তি দ্রুত দেওয়া হবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করা হবে।