লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের পশ্চিম সারডুবী গ্রামের শহিদ সুজনের লাশ মৃত্যুর ৫ মাস ২৩ দিন পর আদালতের নির্দেশে পারিবারিক কবরস্থান থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকার আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে আহত হওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সুজন। বুধবার দুপুরে তার লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। লালমনিরহাট এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এস এম শাফায়াত আখতার নূরের উপস্থিতিতে লাশ উত্তোলনের কাজ সম্পন্ন হয়। নিহত সুজন ওই এলাকার সহিদুল ইসলামের ছেলে।
গত ৫ আগস্ট ঢাকার আশুলিয়ায় ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন সুজন। সহযোদ্ধারা তাকে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়। পরদিন ৬ আগস্ট তার মরদেহ নিজ গ্রামে নিয়ে এসে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনার প্রায় দুই সপ্তাহ পর, গত ২১ আগস্ট নিহত সুজনের বাবা সহিদুল ইসলাম আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তের স্বার্থে পুলিশ আদালতে আবেদন করলে আদালত লাশ উত্তোলন ও ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন।
বুধবার সকালেই প্রশাসনের উপস্থিতিতে কবর থেকে লাশ উত্তোলনের কাজ শুরু হয়। এ সময় পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে এলাকার পরিবেশ। সুজনের মা দীর্ঘদিন ধরে বিচার দাবি করে আসছিলেন। তার মতে, ছেলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল বলেই তাকে প্রাণ দিতে হয়েছে। তিনি দ্রুত সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচার চান।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহামুদুন নবী জানান, আদালতের নির্দেশ অনুসারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সুজনের লাশ উত্তোলন করা হয়েছে এবং ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, তদন্তের স্বার্থে পরবর্তী কার্যক্রম নেওয়া হবে।
স্থানীয়রা জানান, সুজন ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ও প্রতিবাদী ছাত্র। তার অকাল মৃত্যু এলাকায় শোকের ছায়া ফেলেছে। তার পরিবারসহ স্থানীয় মানুষজন দ্রুত বিচার দাবি করেছেন। তারা মনে করেন, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
শহিদ সুজনের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে এর আগে এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ হয়েছে। তার সহপাঠীরা ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন সুজন হত্যার বিচার চেয়ে আন্দোলন করেছে। তারা অভিযোগ করেছে, রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহার করে আন্দোলন দমন করতে সুজনকে টার্গেট করা হয়েছিল।
এদিকে, সুজনের পরিবার চায়, তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটন হোক এবং দোষীদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। তারা আশা করছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্টের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।