সর্বদলীয় বৈঠক শেষ করে যা জানালেন - সালাউদ্দিন আহমেদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
মোঃ সাইফুল ইসলাম, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ১৬ই জানুয়ারী ২০২৫ ০৬:৫৮ অপরাহ্ন
সর্বদলীয় বৈঠক শেষ করে যা জানালেন - সালাউদ্দিন আহমেদ

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ঘোষণাপত্র নিয়ে আলোচনা করতে ১৬ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ঢাকার বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে একটি সর্বদলীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের বিভিন্ন মতামত ও পরামর্শ ব্যক্ত করেছে, এবং বিষয়টি নিয়ে গভীর আলোচনা হয়। 


বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ঘোষণাপত্র নিয়ে সর্বদলীয় আলোচনা হয়েছে এবং বিভিন্ন দল তাদের পরামর্শ প্রদান করেছে। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, পাঁচ মাস পর এই ঘোষণাপত্রের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তাদের মত অনুযায়ী, যদি ঘোষণাপত্রের কিছু রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক বা আইনি গুরুত্ব থাকে, তাহলে সেগুলো স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা উচিত। 


সালাউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, তারা এই ঘোষণাপত্রে কোনো বিভেদ সৃষ্টি হওয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন। তাদের পরামর্শ ছিল, ঘোষণাপত্রটি যদি রাজনৈতিক বা ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়, তবে সেটা সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রণয়ন করা উচিত। এজন্য সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সর্বজনীন সিদ্ধান্তে পৌঁছানো দরকার। 


এদিন বিকাল ৪টায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে প্রবেশ করেন এবং একে একে বৈঠকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত হতে শুরু করেন। বৈঠকে জামায়াতে ইসলামের সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পরওয়ার, গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের পক্ষ থেকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান এবং যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম উপস্থিত ছিলেন। 


বৈঠকে মূলত জুলাই ঘোষণাপত্রের গুরুত্ব, এর ভবিষ্যৎ প্রভাব এবং রাজনৈতিক ঐক্য বজায় রাখতে কি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মতো বড় দলগুলোর সঙ্গে ছোট দলগুলোর মতামতও শোনা হয়েছে। বৈঠকটি রাজনৈতিক পরিবেশে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছে, যা ভবিষ্যতে দেশে গণতন্ত্র ও রাজনীতির গতিপথে প্রভাব ফেলতে পারে। 


সালাউদ্দিন আহমেদের ভাষ্যমতে, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ঘোষণাপত্রের রাজনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে তারা আরও স্পষ্ট ধারণা পেতে চেয়েছেন। তারা বিশেষভাবে এ বিষয়ে সবার সম্মতি চাইছেন, যাতে কোন একটি দল বা পক্ষের একক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য ভেঙে না পড়ে। তারা মনে করেন, এ ধরনের একটি ঘোষণাপত্র যদি জাতির জন্য সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ হয়, তবে সেটি আরও বৃহত্তর আলোচনা এবং অংশীদারিত্বের মাধ্যমে প্রণয়ন করা উচিত। 


বৈঠক শেষে ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দলের নেতাদের মতামত এবং পরামর্শ গ্রহণ করেন এবং সবাইকে একত্রিত হয়ে দেশের স্বার্থে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সব দলের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব, যা দেশের উন্নতির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। 


এর আগে, জামায়াতের সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পরওয়ার, গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম এবং অন্যান্য নেতারা তাদের নিজ নিজ দলের অবস্থান স্পষ্ট করেন এবং জুলাই ঘোষণাপত্রের সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে আলোচনা করেন। তারা বলছেন, ঘোষণাপত্র যদি জনগণের স্বার্থে হয়, তবে তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হওয়া উচিত এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনও ধরণের বিভেদ সৃষ্টির সুযোগ নেই। 


এদিনের বৈঠকটি দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বিশেষ মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে, কারণ এখানে সবাই তাদের মতামত জানাতে পারছেন এবং সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসে নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে পারছেন। এই বৈঠকের মাধ্যমে দেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা পাওয়া যেতে পারে। 


এটি দেশের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটি নতুন সূচনা হতে পারে, যেখানে সকল দলের মতামত সম্মানিত হবে এবং দেশ উন্নতির দিকে এগিয়ে যাবে।