আমরা আর সীমান্তে লাশ দেখতে চাই না। ফেলানী হত্যাসহ সীমান্তে যত বাংলাদেশি নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে করতে হবে। বৃহস্পতিবার কুড়িগ্রামের নাখারগঞ্জ বাজারে ‘মার্চ ফর ফেলানী’ কর্মসূচিতে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম এ কথা বলেন। তিনি বলেন, সীমান্তে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। আর যদি ভবিষ্যতে সীমান্তে আমাদের ভাই বা বোনের লাশ ঝুলে থাকে, তবে কাঁটাতার লক্ষ্য করে লং মার্চ করা হবে। এই আন্দোলনের প্রতিধ্বনি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
সারজিস আলম আরও বলেন, বাংলাদেশ নতজানু পররাষ্ট্রনীতি মেনে নিতে রাজি নয়। তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানান, যেই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো কাজ করলে তাদের পরিণতি খুনি হাসিনার মতো হবে। তিনি লং মার্চের মাধ্যমে ৫ দফা দাবি তুলে ধরেন, যার মধ্যে রয়েছে ফেলানী হত্যার বিচার, সীমান্তে মরণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ, শহীদ ফেলানীর নামে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবনের নামকরণ, নতজানু পররাষ্ট্রনীতি বাতিল এবং কুড়িগ্রামের চরের জীবনমান উন্নয়নে নদী সংস্কার।
লং মার্চটি কুড়িগ্রামের জেলা শহরের কলেজ মোড় থেকে শুরু হয়ে নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের নাখারগঞ্জ গ্রামে ফেলানীর বাড়িতে শেষ হয়। মার্চ শেষে নাখারগঞ্জ বাজারে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন টাটোয়ারী, সদস্য সচিব আরিফ সোহেল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দপ্তর সম্পাদক জাহিদ আহসান এবং সমন্বয়ক রকিব মাসুদ।
লং মার্চে ফেলানীর বাবা নুর ইসলামও উপস্থিত ছিলেন। তার বক্তব্যে সীমান্ত হত্যা বন্ধের আহ্বান ছিল স্পষ্ট। তিনি জানান, ফেলানীর মতো আর কোনো মেয়েকে যেন এই নির্মমতার শিকার হতে না হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, সীমান্তে হত্যার সংস্কৃতি বন্ধ না হলে কাঁটাতারের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে আন্দোলন হবে।
সারজিস আলম আরও উল্লেখ করেন, সীমান্ত হত্যা বন্ধে বিশ্বব্যাপী প্রচারণা চালানো হবে। বাংলাদেশের নাগরিকরা নিজের অধিকার আদায়ে সচেতন এবং কোনো জোরপূর্বক বাধা তারা মেনে নেবে না। তিনি জানান, এই আন্দোলন শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা পৃথিবীতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার উদাহরণ হয়ে থাকবে।
লং মার্চে অংশগ্রহণকারী সাধারণ জনগণ জানান, তারা এই আন্দোলনের সঙ্গে একমত। ফেলানীর নির্মম হত্যাকাণ্ড আজও তাদের হৃদয়ে দাগ কেটে আছে। তারা চান, সীমান্ত হত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক মহলও সোচ্চার হোক।
নাখারগঞ্জ বাজারের সমাবেশে বক্তারা বলেন, সীমান্তে শান্তি এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হলে অবিলম্বে সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে ফেলানীর মতো অন্যদের হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
সমাবেশের শেষাংশে জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে আরও সচেতনতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন। তারা জানান, সীমান্তে কোনো অন্যায় হলে তার প্রতিকার আদায়ে নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। #
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।