ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জোড়া মসজিদে ১২২তম বার্ষিক উরস শরীফে যোগ দিতে বাংলাদেশ থেকে দুই হাজার ১৫২জন যাত্রী নিয়ে একটি স্পেশাল ট্রেন ভারতের মেদিনীপুরে রওনা করেছে। মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টা ১১মিনিটে রাজবাড়ী রেলস্টেশন থেকে আঞ্জুমান-ই-কাদেরীয়া রাজবাড়ীর উদ্যোগে ভারতের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে এ ট্রেনটি।
বাংলাদেশ-ভারত সরকার যৌথভাবে ১৯০২ সাল থেকে এই ওরশ স্পেশাল ট্রেনটি চলাচলের ব্যবস্থা করে আসছে। মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে রাজবাড়ী রেলস্টেশনে আসেন ট্রেনটি। তারপর থেকে আঞ্জুমান-ই-কাদেরীয়া রাজবাড়ীর উদ্যোগে ট্রেনটি সারাদিন সাজানো হয়। ট্রেনটি দেখতে সারাদিন হাজার হাজার উৎসুক জনতা ভিড় করে।
রাতে মেদেনীপুরগামী ট্রেন যাত্রীদের বিদায় জানান রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী। আরও উপস্থিত ছিলেন রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান, জেলা পুলিশ সুপার এমএম শাকিলুজ্জামান,পৌর মেয়র আলমগীর শেখ তিতুসহ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। দোয়া ও মোনাজাতের পর যাত্রা শুরু হয়।
রাজবাড়ী জেলা আঞ্জুমান-ই-কাদেরীয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মেদিনীপুরে নূরনবী হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) এর ৩২তম ও বড় পীর গাউসুল আযম হযরত আব্দুল কাদের জিলানী(আঃ) এর ১৯তম অধস্তন পবিত্র বংশধর আলী আব্দুল কাদের সামশুল কাদের হযরত সৈয়দ শাহ মোর্শেদ আলী আল কাদেরী আল হাসানী আল হুসাইনী আল বাগদাদী আল মেদিনীপুরী(আঃ) মশহুর নাম “মওলাপাক” এঁর ১২২তম বার্ষিক পবিত্র ওরশ শরীফ আগামী ১৭ই ফেব্রুয়ারী শুক্রবার দিবাগত রাতে মেদিনীপুর জোড়া মসজিদে উদযাপিত হবে।
উক্ত পবিত্র ওরশ শরীফ পরিচালনা করবেন রাসুলে পাক(সাঃ) এঁর ৩৬তম ও বড় পীর গাউস-উল-আযম হযরত আব্দুল কাদের জিলানী(আঃ) পাক এঁর ২৩তম অধস্তন আওলাদ পাক জিল্লেইলাহী, বেলায়েতের রবি, গাউসে জামান লাখো ভক্তের আকা ও কেবলা কাদেরীয়া তরীকার “সাজ্জাদানশীন হুজুরপাক হযরত সৈয়দ শাহ্ ইয়া’সুব আলী আল কাদেরী” আল হাসানী আল হুসাইনী আল বাগদাদী আল মেদিনীপুরী মাদ্দাজিল্লুহুল আলী। এবার দুই হাজার ১৫২ জন ওরশ যাত্রী নিয়ে স্পেশাল ট্রেনটি রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন থেকে মেদিনীপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে।
রাজবাড়ী আঞ্জুমান-ই-কাদেরীয়ার সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল আজিজ কাদেরী খোকন জানান, ১২২তম বার্ষিক পবিত্র ওরশ শরীফ উপলক্ষে আঞ্জুমান-ই-কাদেরীয়া বাংলাদেশের উদ্যোগে ২৪টি খানাবগি সম্বলিত মেদিনীপুর ওরশ স্পেশাল ট্রেনে ১২৪৫ জন পুরুষ, ৮৩২ জন নারী, ৭৫ জন শিশু(বালক-৪৭ বালিকা-২৮) জনসহ মোট ২ হাজার ১৫২ জন ওরশ যাত্রী নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার ১৪ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টা ১১ মিনিটে ট্রেন লিডার আলহাজ্ব মোঃ মাহবুব-উল-আলম দুলাল নেতৃত্বে রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন হতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। পবিত্র ওরশ শরীফ শেষে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি ওরশ স্পেশাল ট্রেনটি রাজবাড়ী ফিরে আসবে ।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত সরকার যৌথভাবে ১৯০২ সাল থেকে এই ওরশ স্পেশাল ট্রেনটি চলাচলের ব্যবস্থা করে আসছে। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে ২০২১ ও ২০২২ সালে ওরশ স্পেশাল ট্রেনটি যাইনি। আঞ্জুমান-ই-কাদেরীয়া বাংলাদেশ উভয় সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ। উক্ত ওরশ শরীফ খানকায়ে কাদেরীয়া বড় মসজিদ রাজবাড়ীতেও অনুষ্ঠিত হবে।
রাজবাড়ীর রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার তন্ময় কুমার জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও বাংলাদেশ এবং ভারত সরকারের রেলওয়ে বিভাগের ব্যাবস্থাপনায় ২৪টি বগির একটি বিশেষ ট্রেন বরাদ্দ করা হয়েছে। ওরস শেষে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজবাড়ী ফিরে আসবে ট্রেনটি।
রাজবাড়ী রেলওয়ে জিআরপি থানার ওসি সোবনাথ বসু জানান, আগামীকাল সকাল ১০ টার দিকে রাজবাড়ী রেল স্টেশনে ট্রেনটি আসবে। সারাদিন ট্রেনটি সাজানোর পর ‘ওরশ স্পেশাল ট্রেনটি রাত ১০টা ১১ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত পোশাক ও সাদা পোশাকে ফোর্স মোতায়েন করে রাখা থাকবে। এছাড়া সারাদিন রেলের ইয়ার্ডে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। রাজবাড়ী রেল স্টেশনের ১, ২, ৩ নং প্ল্যাটফর্মে পুলিশ সদস্যরা যাত্রীদের জানমালের নিরাপত্তায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। রাজবাড়ী থেকে দর্শনা পর্যন্ত জিআরপি পুলিশ টিম স্পেশাল গার্ডে নিয়োজিত থাকবে।
উল্লেখ্য, ১২২ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম ওরশের ১দিন আগে ট্রেনটি মেদিনীপুর পৌছাবে। বাংলাদেশের রাজবাড়ী থেকে উক্ত ওরশে অংশগ্রহণের জন্য ভারতীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ২৪টি বিশেষ বগি সম্বলিত ট্রেনটি সরবরাহ করবে বলে রাজবাড়ী আঞ্জুমান-ই-কাদেরীয়া সূত্রে জানা গেছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।