আশাশুনি হাসপাতালে জনবল সংকট,দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রেগিদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
সচ্চিদানন্দদেসদয়, আশাশুনি উপজেলা প্রতিনিধি, সাতক্ষিরা
প্রকাশিত: সোমবার ১৭ই জানুয়ারী ২০২২ ০৩:০৫ অপরাহ্ন
আশাশুনি হাসপাতালে জনবল সংকট,দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রেগিদের

আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকটের কারণে ভেঙ্গে পড়েছে স্বাস্থ্য সেবার মান। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ২১জন এমবিবিএস চিকিৎসকের পদ থাকলেও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ ৫জন এমবিবিএস চিকিৎসক দিয়ে কোন রকম চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। এর ভিতরে ২জন ফেব্রুয়ারীর শেষে চলে যাবেন। এছাড়াও অন্য একজন বদলীর জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানাগেছে। তিনি যদি বদলীর আদেশ হাতে পান ও অন্য দুইজন যদি ফেব্রুয়ারীর শেষ সপ্তাহে চলে যান, এর ভিতরে যদি নতুন কোন চিকিৎসক যোগদান না করেন, তাহলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ মাত্র ২জন চিকিৎসক এ হাসপাতালে কর্মরত থাকবেন।


সরকারি হাসপাতালটি দৃষ্টিনন্দন ও বহুতল ভবন বিশিষ্ট হলেও এখানে হাসপাতালের প্রাণভোমরা এমবিবিএস চিকিৎসক কম থাকায় উপজেলার ১১ ইউনিয়নের মানুষের চিকিৎসা সেবা দেওয়া অনেকটা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। ২০২০ সালের ২৫শে জানুয়ারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সুদেষ্ণা সরকার আশাশুনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদানের পর থেকে অদ্যবধি পর্যন্ত আশাশুনিবাসীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তিনি। তিনি যোগদান করেই প্রথমে হাসপাতালকে দৃষ্টিনন্দন করতে হাসপাতালের সামনে ফুল ও ফলের বাগান তৈরী করেন।


করোনা ও আম্পান এর সময় গ্রামে গ্রামে গিয়ে ক্যাম্প করে রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছেন। এছাড়াও তিনি হাসপাতালে স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্ণার, স্বাস্থ্য বার্তা প্রচারের জন্য টিভি স্থাপন, হাসপাতালের হলরুম সুসজ্জিতকরণ করেছেন। হাসপাতাল এরিয়ায় অন্ধকার দূরীকরণের লক্ষে স্ট্রীট লাইট স্থাপন, সঠিক নিরাপত্তা ও দ্বায়িত্বরতদের তদারকির জন্য সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছেন। কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেন ইউনিট এবং নমুনা সংগ্রহ বুথ স্থাপন করেছিলেন। হাসপাতালের পরিষ্কার পরিছন্নতা নিশ্চিতকরণ ও মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন কার্যক্রম গতিশীল করতে নিরালস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তিনি। এছাড়াও তিনি সিজারিয়ান (অপারেশন) চালু, আল্ট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি, এক্সরেসহ বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন।


এতকিছু করার পরও হাসপাতালে জনবল সংকটের কারণে কিছুদিন আগে থেকে সবকিছু যেন মুখ থুবড়ে  পড়েছে। জনসাধারন ১ মাস আগেও হাসপাতালে এসে ভালো সেবা পেলেও এখন জনবল সংকটের কারণে অনেকেই তাদের কাঙ্খিত সেবা তারা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানাগেছে, এ হাসপাতালে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক এর পদ থাকলেও তিনি নামে এখানে আছেন, ডিউটি করেন সদর হাসপাতালে। সার্জারী, মেডিসিন, এ্যানেস্থিসিয়া, গাইনী, আরএমও, মেডিকেল অফিসারের ২টি পদ ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সহকারী সার্জন এর ৯টি পদে নেই কোন চিকিৎসক।


এছাড়াও হাসপাতালটিতে সনোরজিস্ট, প্যাথলজিস্ট, পরিসংখ্যানবিদ, স্টোর কিপার, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ডেন্টাল), জুনিয়ার ম্যাকানিক, ওয়ার্ড বয়, নিরাপত্তা প্রহরী, সুইপাসহ বিভিন্ন পদে নেই কোন জনবল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী জানান, এ হাসপাতালের আবাসিক ভবন ভালো না হওয়ায় ও হাসপাতালটি শহরমুখী না হওয়ায় এখানে এসেই অধিকাংশ চিকিৎসক এবং কর্মচারীরা বদলী হওয়ার জন্য দৌড়ঝাপ শুরু করে দেন। অন্যদিকে, হাসপাতালটিতে চিকিৎসকের অভাবে রোগীরা ঠিকমত চিকিৎসা সেবা না পাওয়া, অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর কর্তৃক সেবা নিতে আসা রোগীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করাসহ রয়েছে অনেক অভিযোগ।


বর্তমান সরকার যেখানে স্বাস্থ্য খাতকে উন্নত করতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, সেখানে আশাশুনি সরকারী হাসপাতালে এই বেহাল দশার কারণে সরকারের ভাবমুর্তি মারাত্বক ভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলে দাবী এলাকাবাসীর। স্থানীয়রা জানান, বর্তমান স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা যোগদানের পর থেকে কয়েক মাস আগে পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ভালো সেবা পাওয়া যেত। এখানে কিছুদিন আগেও বিনামূল্যে সিজারিয়ান অপারেশন করা যেত। এতে উপজেলার অনেক অসহায় রোগীর অর্থ খরচ বেচে যেত। সেবার মানও অনেক ভালো ছিল। হাসপাতাল থেকে সেবা কোন প্রকার হয়রানি ছাড়াই পাওয়া যেত। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে এখন এখানে অপারেশনও হয়না ও আগের মত সেবাও পাওয়া যায়না।


উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সুদেষ্ণা সরকার বলেন, চিকিৎসক হওয়ার শপথ যখন নিয়েছি তখন মানুষের সেবা দিয়েই যাব। আমি যোগদানের পর থেকে আজ পর্যন্ত আশাশুনিবাসী জরুরি প্রয়োজনে আমাকে পাশে পেয়েছে এবং ভবিষ্যতেও পাবেন। চিকিৎসকদের মানুষের পাশে থাকা খুব দরকার। আমরা যদি এখন পিছিয়ে যাই তাহলে আমরা আমাদের শপথ পূরণ করতে পারব না। আমরা যেহেতু ডাক্তার তাই আমাদের জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত কাজ করে যাব। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসকসহ জনবল সংকটের বিষয়টি সিভিল সার্জনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়কে অবহিত করা হয়েছে। আমরা সীমিত জনবল দিয়ে হলেও রোগীদের সাধ্যমত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।


আমিসহ আমার বাকী ৪ ডাক্তার দিনে ও রাতে হাসপাতালে আগত রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।  এখনো আমাদের থেকে তেমন কেউ সেবা বঞ্চিত হচ্ছে না। তবে উনারা চলে গেলে আমাদের ২/৩ জনের পক্ষে সেবা দিতে কষ্টসাধ্য হবে। জনবল সংকট মোটামুটি দূর হলে আশাকরি হাসপাতাল থেকে কেউ সেবা বঞ্চিত হবেন না। এদিকে, আশাশুনি হাসপাতালের জনবল সংকট দূর করে সকল জনসাধারনের কাঙ্খিত সেবা পাওয়ার ব্যবস্থা করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন উপজেলাবাসী।