নামাজ ফরজ হোক কিংবা নফল হোক, সব নামাজই দাাঁড়িয়ে পড়তে হয়। কারণ দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া ফরজ। নামাজের ভেতরের রোকনগুলোর মধ্যে একটি হলো দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া। নামাজের মধ্যে এমন আরও অনেক রোকন আছে। যদি কেউ অসুস্থতা কিংবা অক্ষমতার কারণে কোনো রোকন পালন করতে না পারে তবে ওই ব্যক্তি কীভাবে নামাজ পড়বে?
মুমিন মুসলমানের জন্য ঈমানের পর প্রথম ও প্রধান ইবাদত হচ্ছে নামাজ। নামাজের রোকনগুলো যথাযথভাবে আদায় করতে না পারলেও নামাজের ফরজিয়ত তথা আবশ্যকতা থেকে বিরত থাকার সুযোগ নেই। হাদিসে এসেছে-হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, 'আমার অশ্ব রোগ ছিল। এ অবস্থায় আমি কিভাবে নামাজ আদায় করবো তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, ‘দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় কর, যদি না পার; তবে বসে (নামাজ আদায়) কর, তাও যদি না পার, তাহলে এক পার্শ্বের উপর (নামাজ) আদায় কর।’ (বুখারি)
অসুস্থতায় কীভাবে নামাজ পড়তে হবে সে সম্পর্কে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকনির্দেশনা রয়েছে। হাদিসের আলোকে ইসলামিক স্কলাররাও অসুস্থ ও অপারগ ব্যক্তিদের নামাজের ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন।অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য ইসলামিক স্কলারদের পরামর্শ-কোনো ব্যক্তি অসুস্থ হলে কিংবা দাঁড়াতে অপারগ হলে তাকে চতুষ্পদ (চারজানু) হয়ে বসে অথবা তাশাহহুদের বৈঠকের ন্যায় বসে নামাজ আদায় করতে হবে।অসুস্থ ব্যক্তি যদি বসে নামাজ আদায় করা অবস্থায় দাঁড়াতে সক্ষম হয় অথবা বসে নামাজ আদায় করা অবস্থায় সেজদা করতে সক্ষম হয় কিংবা পার্শ্বের উপর ভর করে নামাজ পরা অবস্থায় বসতে সক্ষম হয় তবে ওই ব্যক্তি যা করতে সক্ষম, সে অবস্থা অনুযায়ী নামাজ আদায় করা তার জন্য ওয়াজিব বা আবশ্যক।
অসুস্থ ব্যক্তি যদি বসে বসে নামাজ আদায় করতে অপারগ হয় তবে ডান পার্শ্বের উপর ভর দিয়ে নামাজ আদায় করবে। যদি তাতেও কষ্টকর হয় তবে ওই ব্যক্তিকে বাম পার্শ্বের উপর ভর দিয়ে নামাজ আদায় করতে হবে।অসুস্থ ব্যক্তি যদি দাঁড়াতে ও বসতে সক্ষম হয় কিন্তু রুকু ও সেজদায় যেতে না পারে তবে দাঁড়ানো অবস্থায় অথবা বসা অবস্থায় ইশারার মাধ্যমে রুকু ও সেজদা করবে।এভাবেও যদি নামাজ পড়তে সক্ষম না হয়, তবে কেবলার দিকে পা দিয়ে চিত হয়ে শুয়ে মাথা দ্বারা বুকের দিকে ইশারা করে রুক ও সেজদা আদায় করবে। তবে সেজদার সময় রুকুর চেয়ে একটু বেশি মাথা ঝুকাবে।
আর যে ব্যক্তি জমিনের উপর সেজদা করতে অক্ষম সে বসে বসে রুকু ও সেজদা করবে। সেজদাকে রুকুর চেয়ে একটু বেশি নিচু করবে এবং উভয় হাত হাঁটুর ওপরে রাখবে।প্রথমত অসুস্থ ব্যক্তিকে অবশ্যই দ্বীনদার চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। আর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী যে কোনোভাবে নামাজ আদায় করা বৈধ হবে।জ্ঞান থাকা পর্যন্ত কোনো ব্যক্তির জন্য নামাজ না পড়ায় নিষেধ নেই। জ্ঞানসম্পন্ন অবস্থায় অসুস্থ ব্যক্তিকেও নামাজ আদায় করতে হবে। অর্থাৎ সুস্থ ব্যক্তির জন্য যেমন নামাজের হুকুম রয়েছে ঠিক অনুরূপ হুকুম অসুস্থ ব্যক্তির নামাজের ব্যাপারেও প্রযোজ্য।
মনে রাখতে হবে
অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্যও সুস্থ্য ব্যক্তির মতোই কেবলামুখী হয়েই নামাজ আদায় করা আবশ্যক। যদি না পারে তবে তার অবস্থার আলোকে যে দিকে ফিরে নামাজ আদায় করা সহজ হয়, সে দিকে ফিরেই নামাজ আদায় করতে হবে। পার্শ্ব নাড়িয়ে কিংবা আঙ্গুলের ইশারায় নামাজ আদায় করলে তা সহিহ হবে না।
উল্লেখ্য যেসব অসুস্থ ব্যক্তি মসজিদে যেতে সক্ষম তার জন্য মসজিদে গিয়ে জামাআতের সঙ্গে নামাজ আদায় করা জরুরি। সে সক্ষম হলে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করবে আর না পারলে যেভাবে সুবিধা হয় সেভাবে জামাআতে নামাজ আদায় করবে। তবে কোনোভাবেই মসজিদে জামাআতের পরিবেশ নষ্ট করা যাবে না।যেহেতু নামাজ মুমিন মুসলমানের জন্য ঈমানের পর প্রথম ও প্রধান ইবাদত।
তাই সবার জন্য যথা সময়ে নামাজ আদায় করা জরুরি। কেননা পরকালে ঈমানদার ব্যক্তিদের থেকে সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব গ্রহণ করা হবে। যে ব্যক্তি সহজে নামাজের হিসাব দিতে পারবে, তার পরবর্তী সব হিসাবই সহজ হয়ে যাবে।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সহজে নামাজের হিসাব দিতে দুনিয়াতে সুস্থ ও অসুস্থ অবস্থায় যথাযথভাবে সময় মতো নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। সবার জন্য নামাজকে দুনিয়া ও পরকালের সফলতার মাধ্যম হিসেবে কবুল করুন। আমিন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।