প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৪৬
প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে বজ্রপাত ও অতিবৃষ্টি মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে দেয়। বাংলাদেশসহ অনেক দেশে প্রতিবছর শত শত মানুষ বজ্রপাত বা বন্যার কবলে পড়ে প্রাণ হারায়। ইসলাম এসব বিপর্যয়কে আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা ও সতর্কবার্তা হিসেবে দেখে। রাসূলুল্লাহ (সা.) শিখিয়েছেন, বিপর্যয় আসলে মুমিনদের ধৈর্যশীল হয়ে আল্লাহর দিকে বেশি করে ফিরে যেতে হবে এবং দোয়া করতে হবে।
হাদিসে এসেছে, আকাশে বজ্রপাত বা তীব্র ঝড়-বৃষ্টি হলে রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেন, “রাসূলুল্লাহ (সা.) মেঘ বা বাতাস দেখলে তাঁর চেহারার রঙ পরিবর্তন হতো। আর বৃষ্টি হলে তিনি বলতেন, ‘হে আল্লাহ! এটি কল্যাণের বৃষ্টি করো’” (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)। এর মাধ্যমে তিনি আমাদের শিখিয়েছেন বিপদ আসলে আতঙ্কিত না হয়ে আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা চাইতে।
বজ্রপাত বা তীব্র বৃষ্টি শুরু হলে ঘরে অবস্থান করা এবং নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়া সুন্নতসিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যখন তোমরা বজ্রপাত বা ঝড়ো হাওয়া দেখতে পাও, তখন আল্লাহর কাছে দোয়া করো এবং ঘরের ভেতরে অবস্থান করো” (মুসনাদ আহমদ)। এর মাধ্যমে বোঝা যায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় নিরাপত্তা নেওয়া ইবাদতের অংশ।
হাদিসে বজ্রপাতের শব্দ শোনার পর রাসূলুল্লাহ (সা.) যে দোয়া পড়তেন তা হলো: “সুবহানাল্লাযী যুবিহুর্ রা’দু বিহামদিহী ওয়াল মালায়িকাতু মিন খীফাতিহী” অর্থাৎ “পবিত্র তিনি যাঁকে ভয়ে বজ্রধ্বনি ও ফেরেশতারা তাঁর প্রশংসা করে” (মুয়াত্তা মালিক)। এটি পড়লে মুমিনের অন্তরে প্রশান্তি আসে।
বজ্রপাত ও অতিবৃষ্টির সময় নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা করা গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর” (সূরা বাকারা: ১৫৩)। দুর্যোগময় সময়ে ইস্তেগফার ও তাওবা করাও ইসলামের অন্যতম নির্দেশনা। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তেগফার করে, আল্লাহ তার জন্য প্রতিটি দুঃখ থেকে মুক্তির পথ সৃষ্টি করেন” (আবু দাউদ)।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আতঙ্কিত হয়ে কুসংস্কার বা ভুল কাজ করা থেকে বিরত থাকা উচিত। ইসলাম এসব বিপর্যয়কে গুনাহ থেকে তওবা এবং জীবনকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার সুযোগ হিসেবে উল্লেখ করেছে। তাই বৃষ্টি বা বজ্রপাতের সময় ভয় না পেয়ে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা চাইতে হবে।
বজ্রপাত বা অতিবৃষ্টির সময়ে দরিদ্রদের সাহায্য করা এবং দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহযোগিতা করাও ইসলামের দিকনির্দেশনা। হাদিসে এসেছে, “মানুষের মধ্যে সে-ই উত্তম যে মানুষের উপকার করে” (মুসনাদ আহমদ)। বিপর্যয়ের সময় দান-সদকা ও মানবিক সহায়তা আল্লাহর রহমত লাভের বড় উপায়।
সবশেষে বলা যায়, বজ্রপাত বা অতিবৃষ্টি হলে আতঙ্কিত না হয়ে নিরাপদ স্থানে থাকা, দোয়া করা, নামাজ আদায় করা, ইস্তেগফার ও তাওবা করা এবং মানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসা ইসলামের মূল শিক্ষা। এই শিক্ষাগুলো মেনে চললে মুমিন ব্যক্তি শুধু নিরাপদই থাকবেন না বরং আল্লাহর রহমতের যোগ্য হবেন।