প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৩৪
বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে শিক্ষা ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হচ্ছে জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি একজন মানুষকে সৎ, নৈতিক ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। ইসলাম শিক্ষা ও নৈতিকতার এই সমন্বয়কে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। পবিত্র কোরআন ও রাসূল (সা.)-এর হাদিসে বারবার জোর দিয়ে বলা হয়েছে, কেবল জ্ঞান অর্জন নয়, বরং সেই জ্ঞানকে সঠিক পথে কাজে লাগানোই একজন প্রকৃত শিক্ষার্থীর গুণ। এ কারণেই ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি উত্তম চরিত্র পূর্ণ করতে পাঠানো হয়েছি’। এই হাদিস থেকে স্পষ্ট হয় যে শিক্ষাক্ষেত্রে নৈতিকতা শেখানো শুধু একটি আনুষ্ঠানিক বিষয় নয় বরং একজন মুসলিমের জীবনের অপরিহার্য অংশ। আজকের দিনে আমাদের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যে নৈতিক অবক্ষয় দেখা যাচ্ছে তা দূর করতে ইসলামী নৈতিকতার পুনর্জাগরণ প্রয়োজন।
শিক্ষার্থীদের আচরণ, পোশাক, কথাবার্তা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রে ইসলামের শিক্ষা অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন’। এই আয়াত শিক্ষার্থীদের মনে নৈতিকতার প্রতি গভীর অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে। শিক্ষক ও অভিভাবকদের উচিত শিক্ষার্থীদের শুরু থেকেই নৈতিকতার চর্চা করানো।
বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাড়ছে। একদিকে এটি জ্ঞানার্জনের সুযোগ তৈরি করছে, অন্যদিকে নৈতিক বিচ্যুতির ঝুঁকিও বাড়াচ্ছে। ইসলামের আলোকে সঠিক নৈতিক দিকনির্দেশনা দিলে শিক্ষার্থীরা সহজেই এই ফাঁদ থেকে রক্ষা পেতে পারে। শিক্ষক ও সমাজ নেতাদের উচিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোরআন-হাদিস ভিত্তিক জীবনদর্শন তৈরি করা।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈতিক শিক্ষা কেবল বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না, বরং বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগের সুযোগ তৈরি করতে হবে। যেমন সততা, সময়ানুবর্তিতা, অন্যের প্রতি সম্মান দেখানো—এসব ইসলামী গুণাবলি। শিক্ষকরা যদি শিক্ষার্থীদের সামনে আদর্শ হয়ে দাঁড়ান, তাহলে তারা স্বাভাবিকভাবেই নৈতিক আচরণ শিখবে।
শিক্ষাক্ষেত্রে ইসলামী নৈতিকতা কেবল ব্যক্তিগত উন্নয়ন নয়, সমাজ উন্নয়নেরও প্রধান হাতিয়ার। একজন নৈতিকভাবে দৃঢ় শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে সৎ রাজনীতিক, দক্ষ প্রশাসক বা সফল উদ্যোক্তা হতে পারে। তাই ইসলামের দিকনির্দেশনা মানলে শিক্ষাক্ষেত্র হবে দুর্নীতিমুক্ত ও আদর্শবান ব্যক্তিত্ব তৈরির ক্ষেত্র।
অভিভাবক, শিক্ষক, প্রশাসন ও নীতিনির্ধারকদের একসাথে কাজ করতে হবে যাতে ইসলামের নৈতিক শিক্ষা কার্যকরভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রয়োগ হয়। এর ফলে শিক্ষার্থীরা নিজেদের জীবনে কোরআন ও হাদিসের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।
সর্বোপরি, ইসলামের শিক্ষাব্যবস্থা ও নৈতিক দিকনির্দেশনা মেনে চললে আমরা একটি নৈতিক, সুশৃঙ্খল ও সৃজনশীল প্রজন্ম গড়ে তুলতে পারব যারা শুধু জ্ঞানীই হবে না বরং আল্লাহভীরু ও সৎ নাগরিক হবে। এই দিকনির্দেশনা শুধু মুসলিম সমাজের জন্য নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির কল্যাণে অবদান রাখবে।