প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৪১
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলায় একদিনে অন্তত ৮৫ জন নিহত হয়েছেন। নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে একটি স্টেডিয়ামে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর ওপর চালানো হামলায় অন্তত ১২ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আল-আহলি স্টেডিয়াম দীর্ঘদিন ধরে গাজার বহু বাস্তুচ্যুত মানুষের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল, সেখানেই রক্তাক্ত হত্যাযজ্ঞের ঘটনা ঘটেছে।
গাজা সিটি থেকে পালিয়ে আসা নাজওয়া নামের এক নারী আল জাজিরাকে বলেন, হাতে যা ছিল তাই নিয়ে বেরিয়েছি, আমাদের কিছুই বাকি নেই। তিনি জানান, যাতায়াতের খরচ এত বেশি যে পালানোও কঠিন হয়ে গেছে, আর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনারও সামর্থ্য নেই। এই অবস্থায় গাজার মানুষের আতঙ্ক দিন দিন বেড়েই চলেছে।
জাতিসংঘ সতর্ক করেছে যে ইসরায়েলি সেনারা গাজা সিটিতে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে এবং হাজারো মানুষকে পালাতে বাধ্য করছে। তবে ইসরায়েলি সেনাপ্রধান এয়াল জামির দাবি করেন, নিরাপত্তার স্বার্থে ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণ দিকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে এবং এটি একটি সাময়িক ব্যবস্থা।
জাতিসংঘের অনুসন্ধান কমিশন বলেছে, ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড আসলে গাজায় স্থায়ী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং পশ্চিম তীরে ইহুদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। এর পাশাপাশি জামির জানান, গাজার বেশিরভাগ মানুষ ইতোমধ্যেই গাজা সিটি ছেড়ে গেছে এবং সেনারা সেখানে অভিযান আরও জোরদার করবে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৫ হাজার ৪১৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন এক লাখ ৬৭ হাজারের বেশি মানুষ। ধারণা করা হচ্ছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও বহু মানুষ চাপা পড়ে আছেন যাদের উদ্ধারের কোনো সুযোগ নেই।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে গাজার যুদ্ধ ইসরায়েলবিরোধী তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান বলেন, যারা শিশু হত্যা করে মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে তারা মানবতার যোগ্য নয়। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল-শারআ অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে বলেন, গাজার জনগণের পাশে আছি এবং এই যুদ্ধ এখনই থামাতে হবে।
নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ আইদে আল জাজিরাকে জানান, শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য নীরব আলোচনায় অগ্রগতি হচ্ছে। জুলাইয়ে ১৪২টি দেশ যে নিউইয়র্ক ঘোষণা সমর্থন করেছে তার ভিত্তিতেই এই উদ্যোগ চলছে। মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ বলেন, ওয়াশিংটন আশাবাদী যে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে অগ্রগতির ঘোষণা আসবে।
তবে পূর্ববর্তী শান্তি প্রচেষ্টা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু চলতি মাসের শুরুর দিকে দোহায় হামাস নেতাদের ওপর হামলার নির্দেশ দেন। এর আগে ১৮ মার্চ তিনি একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে গাজায় তীব্র বোমাবর্ষণ শুরু করেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ইতোমধ্যেই তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।