প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:৫৯
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতীয় নীতি ও কর্মকাণ্ড নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে গত বছরের গণঅভ্যুত্থান ভারতের পছন্দের নয়, যা দুই দেশের সম্পর্ককে প্রভাবিত করেছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ভারতের সমালোচনা ড. ইউনূস করেছেন মার্কিন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সার্জিও গোরের সঙ্গে বৈঠকে। সার্জিও গোর যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত এবং এক মাস আগে ভারতের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা জানান, ভারতের প্রোপাগান্ডা ও ভুয়া খবর বাংলাদেশের অভ্যুত্থানকে অন্যরূপে তুলে ধরেছে। তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের প্রচারিত সংবাদ সত্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং এটি দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে।
ড. ইউনূস ভারতের আশ্রয়ে থাকা সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়টিও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ভারতের আশ্রয় গ্রহণ পরিস্থিতি জটিল করেছে এবং এটি দুই দেশের সম্পর্ককে আরও কড়া করেছে। প্রধান উপদেষ্টা ভারতের ভূমিকা এবং সার্ক জোটের কার্যক্রমে বাধা দেওয়াকে নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সার্ক বর্তমানে কার্যকর হচ্ছে না কারণ ভারতের রাজনৈতিক স্বার্থ জোটের কার্যক্রমের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
ড. ইউনূস আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ এশিয়ার আরেক জোট আসিয়ানে যোগ দেওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছে। তিনি বলেন, সার্কের সম্মেলন দীর্ঘদিন ধরে অনুষ্ঠিত হয়নি। সর্বশেষ ২০১৪ সালে সম্মেলন হয় এবং ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও ভারত পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে বিমসটেককে বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় সার্ক কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ভারত বিমসটেকের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যোগাযোগ রাখলেও তারা সার্ককে গুরুত্ব দিচ্ছে না। তিনি ভারতীয় নীতিকে সমালোচনা করে বলেন, এটি শুধু বাংলাদেশই নয়, পুরো অঞ্চলের সহযোগিতা ও সংহতিকে প্রভাবিত করছে।
বৈঠকে আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক, ভারতের প্রভাব এবং সার্ক ও আসিয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও রয়েছে। ড. ইউনূস আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী এবং সমন্বিত হবে।
ড. ইউনূসের মন্তব্য প্রমাণ করে, বাংলাদেশের স্বার্থে ভারতীয় নীতিমালা ও ভূ-রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে পর্যবেক্ষণ এবং সমালোচনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশকে অভ্যুত্থানের লক্ষ্য পূরণে পরিচালিত করতে হলে দুই দেশের মধ্যে স্বচ্ছতা ও ন্যায়সঙ্গত কূটনৈতিক সমঝোতা অপরিহার্য।