চক্ষু ইনস্টিটিউটে ১০৩ আহত, চিকিৎসা নিয়ে হতাশা

নিজস্ব প্রতিবেদক
বিশেষ প্রতিবেদক - স্বাস্থ্য বিভাগ
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ১১ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:১১ পূর্বাহ্ন
চক্ষু ইনস্টিটিউটে ১০৩ আহত, চিকিৎসা নিয়ে হতাশা

আগারগাঁও জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে এখনো রয়েছেন ১০৩ জন চোখে গুলিবিদ্ধ আহত। তাদের অনেকেরই এক বা দুই চোখে গুলি লেগেছে, কেউ কেউ একাধিক অস্ত্রোপচারের পরও দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাননি। আহতরা অভিযোগ করছেন, তারা আশানুরূপ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। স্বজনরা বলছেন, আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা উপদেষ্টাদের প্রথম কাজ হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু এখনো শহিদ পরিবারের অনেকে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। আন্দোলনে অংশ নিয়ে তারা কি ভুল করেছেন, এমন প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে।  


গত সপ্তাহে জানুয়ারির শেষের দিকে সুচিকিৎসাসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে আন্দোলনরত আহতরা জাতীয় চক্ষু হাসপাতাল ও পঙ্গু হাসপাতালের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। পরে উপদেষ্টাদের আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করেন। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে আহত ও শহিদদের হত্যার বিচার, ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুসারীদের অপসারণ ও গ্রেফতার, আহতদের পুনর্বাসন, চিকিৎসার সর্বোচ্চ সুবিধা, রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ও আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধি। আহতদের অনেকে বলছেন, দাবি পূরণ না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।  


চতুর্থ তলায় ৩৩ নম্বর বিছানায় চিকিৎসাধীন রয়েছে ১৩ বছরের তানিম বায়েজিদ, মুন্সীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এক চোখে কিছুই দেখতে পায় না সে। তার মা তাহমিনা বলেন, ‘আমার ছেলেটার কী হবে? তার জন্য কি কিছুই করার নেই?’ ১১ বছরের তামিম মাহমুদ সিলেটের গোবিন্দগঞ্জের বাসিন্দা। আন্দোলনের কোলাহল দেখতে গিয়ে চোখে গুলি লেগেছে তার। ১২ বছরের সাকিবুল হাসানের চোখেও গুলি লাগে একইভাবে। চিকিৎসা চললেও চোখের আলো ফেরেনি। এক চোখ হারিয়ে সাকিবুল ও তার মা গভীর হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন।  


১৫ বছরের আব্দুর রহিম অভাবের কারণে থাইগ্লাসের দোকানে কাজ করত। ১৯ জুলাই বসুন্ধরার নর্দা এলাকায় গুলি লাগে তার চোখে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, ডান চোখে আর আলো ফিরবে না। ১৮ বছরের বাক্প্রতিবন্ধী সেলিম মিয়ার চোখে দুইবার অস্ত্রোপচার হয়েছে। তার শরীরে এখনো ৫০-৬০টি ছররা গুলি বিঁধে আছে। তার মা সেলিনা বেগম বলেন, ‘সে কথা বলতে পারে না, শরীরে অনেক যন্ত্রণা, এক চোখে কিছুই দেখতে পারবে না।’  


ভোলার বিল্লাল হোসেনের ডান চোখে ২০ শতাংশ দৃষ্টিশক্তি থাকলেও বাম চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। সোমবার তার বাম চোখে কৃত্রিম চোখ বসানো হবে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন। ১৮ জুলাই বরিশালে অটোরিকশা চালানোর সময় তার দুই চোখে গুলি লাগে। বাম চোখে দুইটি গুলি লাগায় সেটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে।  


আহতদের পরিবার বলছে, এতদিন পার হলেও তাদের পুনর্বাসন ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি। দেশে বিত্তবানরা চাইলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেক আহতের চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে পারতেন, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেননি। হাসপাতালে মাসের পর মাস পড়ে থাকলেও তাদের প্রতি কারও দৃষ্টি নেই।  


আহতদের দাবি, তারা যে আন্দোলনের জন্য জীবন উৎসর্গ করলেন, সেই আন্দোলনের নেতারা কি তাদের ভুলে গেলেন? তাদের সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন, নিরাপত্তা ও অর্থসহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। সরকার ও দায়িত্বশীলদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, আমাদের দিকে তাকান, না হলে ভবিষ্যতে আরও কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।