কুমিল্লার চান্দিনায় সাবরেজিস্ট্রার মাসে গড়ে ৩০ লাখ টাকা ঘুস নেন

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার ১১ই নভেম্বর ২০২৪ ১০:৪৩ পূর্বাহ্ন
কুমিল্লার চান্দিনায় সাবরেজিস্ট্রার মাসে গড়ে ৩০ লাখ টাকা ঘুস নেন


কুমিল্লা প্রতিনিধি: কুমিল্লার চান্দিনা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের সাবরেজিস্ট্রার নিরত ভরণ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে ঘুস আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। সেবাপ্রত্যাশীদের থেকে প্রতিটি দলিল সম্পাদনে মাসে গড়ে ৩০ লাখ টাকা ঘুস নেন তিনি, এমনটি জানিয়েছেন অভিযোগকারী সূত্রগুলো।


জানা গেছে, সাবরেজিস্ট্রার নিরত ভরণ বিশ্বাস তার অফিসের কর্মচারী, দালাল এবং দলিল লেখকদের ব্যবহার করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন। প্রতিটি দলিল সম্পাদন করতে সেবাপ্রত্যাশীদের থেকে সরকারি ফির বাইরে সেরেস্তা, নকল, স্বাক্ষর, টিপসইসহ নানা খাতে টাকা আদায় করা হয়। বিশেষভাবে, প্রতি দলিল থেকে সেরেস্তার নামে অতিরিক্ত ২ হাজার টাকা, নকলের জন্য ২০০ টাকা, এবং টিপসই বাবদ ১০০ টাকা নেওয়া হয়। এছাড়া, ত্রুটিযুক্ত বা ভুল নাম-ঠিকানা যুক্ত দলিলের জন্য ২০-২৫ হাজার টাকা ঘুস দাবি করা হয়।


চান্দিনা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে মাসে গড়ে ৫০০ দলিল সম্পাদিত হয়, এবং এসব দলিলের মধ্যে অন্তত ১৫০-২০০ দলিলে ত্রুটি বের করে সেগুলোর মাধ্যমে অধিক ঘুস আদায় করা হয়। ত্রুটিপূর্ণ দলিলের কারণে সাবরেজিস্ট্রার মাসে ৩০ লাখ টাকার বেশি উপার্জন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। 


এদিকে, দলিল গ্রহীতারা জানান, সাবরেজিস্ট্রার অফিসে ঘুসের আবদানের জন্য তাদের বাধ্য করা হয়। মাইজখার এলাকার তফাজ্জল হোসেন বলেন, ৩৫ শতাংশ জমির দলিল সম্পাদন করতে গিয়ে তিনি একাধিকবার ঘুস দিতে বাধ্য হন। প্রথমে দলিল লেখক, পরে পিএস কাউছারের কাছে সেরেস্তার নামে ঘুস দেন, এরপর নকলের জন্য ২০০ টাকা, এবং টিপসই বাবদ ১০০ টাকা পরিশোধ করেন। শেষমেশ সাবরেজিস্ট্রার ত্রুটির কথা বলে দলিল আটকে রাখেন এবং অতিরিক্ত ২০ হাজার টাকা দাবি করেন।


অপরদিকে, দলিল লেখক সমিতির কোষাধ্যক্ষ আশিকুর রহমান দাবি করেন, "সাবরেজিস্ট্রার ত্রুটিযুক্ত দলিল থেকে ১৫-২০ হাজার টাকা নেন। তবে তার অফিসে অন্যান্য উপজেলার তুলনায় কম টাকা আদায় করা হয়।" তিনি আরও বলেন, "এ ধরনের অভিযোগে কোনো সত্যতা নেই, কারণ আমাদের সাবরেজিস্ট্রার অত্যন্ত নম্র ও ভদ্র ব্যক্তি।"


তবে সাবরেজিস্ট্রার নিরত ভরণ বিশ্বাস এই সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, "আমি কোনো ধরনের ঘুস গ্রহণ করি না। যদি কেউ অভিযোগ করে থাকেন, তা সঠিক নয়।" 


এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, "যে কোন অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করা হবে। সরকারি ফির বাইরে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

সূত্রঃ যুগান্তর