প্রতিটি মানুষেরই প্রত্যাশা একটি প্রশান্ত হৃদয়ের। কিন্তু বর্তমানে শান্তি ও প্রশান্তি যেন অনেকটা সোনার হরিণ। কারও মনে শান্তি নেই, হৃদয়ে প্রশান্তি নেই। অস্থিরতা, পেরেশানি সারাক্ষণ পিছু লেগেই আছে। তাই সবাই হন্যে হয়ে ছুটছে দিগ্বিদিক। খুঁজছে নানা পথ ও পদ্ধতি। বিনিময়ে শুধু একটি প্রশান্ত হৃদয় চাই। আর এখানেই হোঁচট খাচ্ছে অনেকে। সঠিক পথ ছেড়ে ভুল পথে হাঁটছে। কেউ তো প্রশান্তি খুঁজছে নেশার মধ্যে। আর এভাবে সুস্থ জীবনটাকে ঠেলে দিচ্ছে ধ্বংসের দিকে। অবৈধ সম্পদ উপার্জনেও অনেকে শান্তি খুঁজছে।
দুর্নীতির মাধ্যমে টাকার পাহাড় গড়ে তুলছে। কিন্তু সে টাকাই আরও অশান্তির কারণ হচ্ছে। কেউ বা ঘুরছে মাজারে। মসজিদে সিজদা না করে সিজদা ঠুকছে বাবার পায়ে। এ ছাড়া আরও বিভিন্ন পথ ও পদ্ধতি রয়েছে, কিন্তু কোথাও অধরা শান্তির দেখা মিলছে না। তাহলে কোন পথে পাওয়া যাবে শান্তির দেখা? হ্যাঁ! একটি পথ রয়েছে এবং তা-ই একমাত্র পথ। হৃদয় যিনি সৃষ্টি করেছেন তাঁর বলে দেওয়া পথ। হৃদয়ের প্রশান্তি যাঁর সৃষ্টি তাঁর দেখানো পথ। তা হলো, হৃদয়ের স্রষ্টার সঙ্গে হৃদয়ের সংযোগ স্থাপন। কোরআনে কারিমে আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ রেখ! কেবল আল্লাহর জিকিরেই অন্তরে প্রশান্তি লাভ হয়।’ সুরা রাদ।
এখানে জিকিরের ব্যাপক অর্থ উদ্দেশ্য। অর্থাৎ আল্লাহর একাত্মবাদের স্বীকারোক্তি, তাঁর মনোনীত ধর্মের অনুসরণ, কোরআন-সুন্নাহ বর্ণিত বিভিন্ন জিকির বিশেষত নির্দিষ্ট সময় ও কাজের জন্য রসুলের শেখানো জিকির, কোরআন তিলাওয়াত, নামাজ, আল্লাহর গুণগান গাওয়া, এসবই জিকিরের অন্তর্ভুক্ত। এগুলোর নিয়মিত অভ্যাসের মাধ্যমেই একজন মানুষ পেতে পারে হৃদয়ের প্রশান্তি। আম্বিয়ায়ে কিরাম ও পূর্ববর্তী মনীষীরা তাদের বিভিন্ন কঠিন ও কষ্টের মুহুর্তগুলো পার করেছেন আল্লাহর স্মরণে এবং এর শক্তিতেই শত দুঃখ-কষ্ট হাসিমুখে জয় করতে পেরেছেন।
হজরত ইউনুস (আ.)-কে যখন একটি প্রকান্ড মাছ গিলে ফেলে তিনি বাঁচার কোনো পথ দেখছিলেন না, তখন একমাত্র আল্লাহর স্মরণকেই নিজের প্রশান্তির মাধ্যম বানান এবং বলতে থাকেন, ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জলিমিন’। মুসা (আ.) যখন ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি পেতে বনি ইসরাইলকে নিয়ে রওনা হন তখন একপর্যায়ে কঠিন এক অবস্থার সম্মুখীন হন। সামনে বিশাল সাগর, পেছনে ফেরাউনের হিংস্র বাহিনী। বাঁচার কোনো উপায় নেই। সেই কঠিন মুহুর্তে তিনি আল্লাহকে স্মরণ করেন। বলেন, আমার পালনকর্তা আমায় পথ দেখাবেন। ঠিক তা-ই হলো। তিনি প্রশান্ত মনে সবাইকে নিয়ে সাগর পার হয়ে যান। আর ফেরাউন সদলবলে নিমজ্জিত হয় সাগরে।
এর দ্বারা বোঝা যায়, আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমেই একজন মানুষ প্রশান্ত হৃদয়ের অধিকারী হতে পারে। এ ছাড়া অন্য যা কিছু আছে তার দ্বারা আখিরাতের সুখ-শান্তি দূরের কথা, পার্থিব সুখ-শান্তিও মেলে না। অতএব আমাদের কর্তব্য হলো আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করা। এর মাধ্যমে অসংখ্য ফজিলতের পাশাপাশি লাভ করব একটি প্রশান্ত হৃদয়। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন।
লেখক : মাওলানা মাহমূদ হাসান তাসনীম, ইসলামবিষয়ক গবেষক।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।