উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শনিবার ১২ই জানুয়ারী ২০১৯ ১১:০৭ অপরাহ্ন
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতি’র অভিযোগ তুলে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানালেও আগামী মার্চে অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে বিএনপি ইতিবাচক। দলটির নেতারা বলছেন, নির্বাচনে অংশ না নিলে মাঠপর্যায়ের হতাশাগ্রস্ত নেতাকর্মীরা অন্য দলে যোগ দিতে পারেন। এতে করে দলের সাংগঠনিক শক্তি আরও দুর্বল হয়ে পড়বে। এছাড়া নির্বাচনে না গেলে রাজনৈতিকভাবেও ক্ষতির মুখে পড়তে পারে দল। তবে এই যুক্তির বিপক্ষেও আছে বিএনপির একটি অংশ। তাদের বক্তব্য, নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হবে না। কারণ, নির্বাচনে গেলে নেতাকর্মীদের ওপর নতুন করে হামলা-মামলা বেড়ে যাবে। তাছাড়া, এই সরকারের অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না গত কয়েকটি সিটি নির্বাচনসহ সদ্য শেষ হওয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তা প্রমাণিত হয়েছে। ফলে নির্বাচন গিয়ে যেমন জয়লাভের কোনও সম্ভাবনা নেই, তেমনি সংসদ নির্বাচন পুনরায় অনুষ্ঠানের যে দাবি তোলা হয়েছে তা দুর্বল হয়ে পড়বে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামী এক-দুইদিনের মধ্যে আমরা সিনিয়র নেতারা বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো।’

বিএনপির চেয়ারপারসের কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, গতকাল শুক্রবার (১১ জানুয়ারি) রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা বৈঠক করেন। সেখানে উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি ওঠে। অনেকে নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেন। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বৈঠকে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘জাতীয় সংসদের কলঙ্কময় নির্বাচন তো শেষ হলো। গতবারও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন দখল করে নিয়েছিল, তবে একটা পর্দা ছিল। এবারের সংসদ নির্বাচন এবং গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলো প্রমাণ করলো এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার নূন্যতম সম্ভবনাও নেই। সেহেতু নির্বাচনের প্রশ্নে আমাদের আগের যে সিদ্ধান্ত ছিল, সেটি হয়তো আগামীতে দলীয়ভাবে অন্যভাবে মূল্যায়ন করা হতে পারে। এছাড়া নির্বাচন করার মতো স্বাভাবিক পরিস্থিতি দেশে নেই।’ বিএনপির প্রবাবশালী একটি সূত্র জানায়, বিএনপির উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যাওয়া উচিত। কারণ, তা না হলে মাঠপর্যায়ে হতাশাগ্রস্ত নেতাকর্মীরা অন্য দলে চলে যেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে বিএনপির সবচেয়ে বড় ভয় দলের সাবেক মহাসচিব একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বধীন যুক্তফ্রন্টকে নিয়ে। কারণ, নির্বাচনের আগে বিএনপির নেতৃত্বধীন ২০ দলীয় জোট ভেঙে দুটি দল যুক্তফ্রন্টে যোগ দিয়েছে। তারা এখন সুযোগের অপেক্ষায় আছে বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের জোটে ভেড়ানোর জন্য।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, ‘যুক্তফ্রন্ট এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অংশীদার। এখন তাদের নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে আমাদের। ফলে নির্বাচনের বিষয়ে যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হোক না কেন, বুঝে-শুনে নিতে হবে।’ বিএনপির সম্পাদকমণ্ডলীর একটি সূত্র জানায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে এরই মধ্যে জেলার নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাদের কাছ থেকে কিছু মতামতও এসেছে। এছাড়া দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দলের সিনিয়র নেতারা সাক্ষাতের সময় চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। সাক্ষাতের অনুমতি পেলে এই বিষয়ে খালেদা জিয়ার মতামতও নেওয়া হবে। তবে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতে যাওয়ার আগে লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্তও নেওয়া হবে।’ প্রসঙ্গত, আগামী মার্চে দেশের পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করার পরিকল্পনার রয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। ইসি সবিচালয় এ লক্ষ্যে প্রস্তুতিও শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব