প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ২০:৫৩
কোনো ট্যাগ পাওয়া যায়নি
শাপলা, পিলখানা ও জুলাই গণহত্যার বিচার এবং আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে শুক্রবার জাতীয় জাদুঘরের সামনে ইনকিলাব মঞ্চের ডাকে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমসহ বিভিন্ন শহিদের পরিবার, আন্দোলনকর্মী ও সংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
সারজিস আলম বলেন, “আমরা যখনই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি তুলি, তখন সরকার পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গির দোহাই দেয়।” তিনি প্রশ্ন রাখেন, “যখন শাপলা চত্বর, পিলখানা বা জুলাইয়ে মানুষ হত্যা হয়েছিল, তখন সেই পশ্চিমাদের অবস্থান কোথায় ছিল?” যদিও তিনি তাঁর বক্তব্যে কোনো রাষ্ট্র, সরকার বা উপদেষ্টার নাম উল্লেখ করেননি।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান প্রজন্মকে ভয় করুন। এই প্রজন্মের রক্ত নিয়ে কেউ আবেগের খেলা খেললে, তারা যেকোনো শক্তিকে ক্ষমতা থেকে নামাতে সক্ষম। গণবিচারের দাবিতে চলমান আন্দোলন আরও বেগবান হবে বলে জানান তিনি।
সমাবেশে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি বলেন, “আমরা কোনো রাজনৈতিক দল নই। আমার পরিবারের কেউ শহিদ হয়নি, তবুও প্রতিজ্ঞা করছি—আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করেই ছাড়ব।” তিনি বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিকে ‘দিল্লির দাসত্ব’ থেকে মুক্ত রাখার প্রতিশ্রুতি দেন এবং জানান ইনকিলাব মঞ্চ রক্তের শেষ বিন্দু পর্যন্ত লড়াই করে যাবে।
জুলাই অভ্যুত্থানে শহিদ ইমাম হাসানের ভাই রবিউল আউয়াল বলেন, “এই সরকারের আমলে আমাদের রাস্তায় দৌঁড়াতে হয়। এটা এক ধরনের প্রহসন। আগে বিচার হবে, তারপর নির্বাচন হবে। বিচারই সংস্কারের মূল ভিত্তি হওয়া উচিত।”
শহিদ সাইমের মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার ছেলেকে যাত্রাবাড়ীতে হত্যা করা হয়েছে। তার কোনো দোষ ছিল না। সে কোনো অস্ত্র বহন করছিল না, শুধু আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়েছিল। ঈদ করতে পারিনি, বুকটা শূন্য হয়ে গেছে। হাসিনাকে দেশে এনে ফাঁসি দিতে হবে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ চাই।”
শহিদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহিনা বেগম বলেন, “আমার ছেলেকে আশুলিয়ায় ভ্যানের ওপর পুড়িয়ে মারা হয়েছে। তখন সে জীবিত ছিল। আমি যখন লাশ পাই, তার পায়ে কোনো মাংস ছিল না। আমার সন্তান মানুষ করতে যে কষ্ট করেছি, তা যেন কেউ বোঝে।”
২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ডে নিহত মেজর তানভীর হায়দারের স্ত্রী তাসনূভা মাহা বলেন, “আজও আমি আমার স্বামীর লাশ পাইনি। সেদিন হিন্দিভাষী তিনজন আমাদের বাসায় ঢুকেছিল। আমার সন্তানদের কাপড় খুলে চেক করেছিল ছেলে না মেয়ে। আজ এতগুলো মা তাদের সন্তান হারিয়েছে, বিচার না হলে আমরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারব না।”
শহিদ সোহেল রানার ভাই বলেন, “যে দল আমার ভাইয়ের মতো দুই হাজার মানুষকে হত্যা করেছে, তাদের পুনরায় রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। আমার ভাইয়ের কবর পর্যন্ত চিনতে পারি না। কেন ডিএনএ টেস্ট করে লাশ শনাক্ত করা হলো না?”
আপ-বাংলাদেশের সংগঠক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, “গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে আমাদের রাস্তায় নামতে হচ্ছে, এটা জাতির জন্য লজ্জাজনক। আমাদের বেঁচে থাকতে আওয়ামী লীগ আর রাজনীতি করতে পারবে না।”
সমাবেশে ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়, আগামী ১০০ দিনের মধ্যে জুলাই গণহত্যার দৃশ্যমান বিচার শুরু করতে হবে, নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে, শাপলা গণহত্যাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে এবং জাতিসংঘের সহায়তায় শহিদদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। পাশাপাশি পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ ও সব দলের নির্বাচনি ইশতেহারে আওয়ামী লীগের বিচারের বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করার আহ্বান জানানো হয়।