মৌলভীবাজার জেলার প্রান্তিক কৃষকরা এখন ভুট্টা চাষে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন। বিগত কয়েক বছর ধরে বাম্পার ফলন পাওয়ার কারণে এবং অন্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষের খরচ অনেক কম হওয়ায়, এবারও জেলার কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে ভুট্টা চাষে ঝুঁকেছেন। বিশেষত হাওরাঞ্চলসহ বিভিন্ন উপজেলা, যেখানে কৃষকরা আগে প্রচলিত ফসল চাষ করতেন, সেখানে এখন ভুট্টা চাষে তাদের আয়ের উৎস বদলাতে শুরু করেছে।
এ বছর মৌলভীবাজারে ২৫৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। এটির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ২৯৫ টন এবং বাজারমূল্য আনুমানিক ৬ কোটি টাকা। কৃষকরা আশাবাদী যে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে, ভুট্টা চাষে তাদের লাভ বাড়বে।
মৌলভীবাজার সদর, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ, জুড়ী উপজেলাসহ জেলার হাওরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ সবুজ পাতার আড়ালে হলুদ রঙের ভুট্টা শোভা পাচ্ছে। কৃষকরা জানাচ্ছেন, অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষে পরিশ্রম কম এবং ফলন অনেক বেশি।
ভুট্টা চাষে খরচ কম হলেও উৎপাদন বেশি হওয়ায় এটি বর্তমানে কৃষকদের মধ্যে একটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। শ্রীমঙ্গল উপজেলার কৃষক তৈমুছ মিয়া জানিয়েছেন, তিনি নিজে জমি না থাকলেও লিজ নিয়ে ভুট্টা চাষ করছেন এবং এ বছর ভালো ফলন হয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলার কৃষকরা জানান, ভুট্টা চাষে খরচ কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় তারা ধান চাষের পরিবর্তে ভুট্টা চাষ করতে শুরু করেছেন। এক্ষেত্রে ধানের তুলনায় ঝুঁকি কম এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে তারা আরও লাভবান হতে পারবেন।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দিন জানিয়েছেন, এ বছর ২৫৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে এবং তারা ২ হাজার ২৯৫ টন উৎপাদনের আশা করছেন। এর ফলে বিক্রি হবে প্রায় ৬ কোটি টাকার ভুট্টা।
ভুট্টা চাষে কৃষকদের সহায়তার জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। আগামী বছর জেলার ভুট্টা চাষের পরিমাণ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান, বাংলাদেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল হিসেবে ভুট্টা চাষে উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে। এটি খুব কম পানি প্রয়োজন এবং পতিত জমিতেও চাষ করা যায়। ভুট্টার দানা মানুষের খাদ্য হিসেবে এবং গাছ ও সবুজ পাতা গরু, হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।