গণপরিষদ নির্বাচন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে-নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী

নিজস্ব প্রতিবেদক
জিয়াউল হক জুয়েল (স্টাফ রিপোর্টার)
প্রকাশিত: শুক্রবার ২৪শে জানুয়ারী ২০২৫ ১০:৪৪ অপরাহ্ন
গণপরিষদ নির্বাচন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে-নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী


জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ও সম্ভাবনা নির্ধারণে গণপরিষদ নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, গণপরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়েই দেশের রাজনৈতিক পরিসর এবং সাংবিধানিক কাঠামো পরিবর্তিত হবে। শুক্রবার বিকালে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অনুষ্ঠিত ‘মার্চ ফর ইউনিটি অ্যান্ড জাস্টিস’ শীর্ষক ছাত্র সমাবেশে তিনি এই বক্তব্য দেন।  


নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, “এ মুহূর্তে আমাদের বহুদলীয় সংবিধান প্রয়োজন এবং সবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুজিববাদী সংবিধান থেকে বের হতে হবে।” তার মতে, দেশের জনগণকে গণপরিষদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে, কারণ এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি আরও বলেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে একটি জনগণের পক্ষে, তাদের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, গণতান্ত্রিক সংবিধান গঠন করতে হবে।


নাসিরুদ্দিন আরও বলেন, “বর্তমানে এক ঐতিহাসিক সুযোগ তৈরি হয়েছে, যেটির মাধ্যমে বহুদলীয় গণতন্ত্রের সংবিধান রচনা করা সম্ভব।” তিনি দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের একতার আহ্বান জানান এবং গণপরিষদ নির্বাচনের পথে একত্রিত হতে সবাইকে উৎসাহিত করেন। "এই নির্বাচনে আমাদের দেশের ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে শহিদ হওয়া শ্রমিকদের স্মৃতিও রক্ষা করতে হবে," বলেন তিনি। 


তিনি আরও উল্লেখ করেন, "গণপরিষদের সংবিধানে আমাদের মা-বোনদের অধিকারের প্রশ্নগুলো অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। আমরা এমন একটি সংবিধান চাই, যেখানে দেশের মানুষ কখনো গোলামি শৃঙ্খলে আবদ্ধ হবে না।" তার মতে, গণপরিষদের মাধ্যমে যে সংবিধান তৈরি হবে, তা বাংলাদেশকে ফ্যাসিবাদী শক্তির হাত থেকে মুক্ত করবে এবং গণতান্ত্রিক কাঠামো প্রতিষ্ঠিত করবে।


নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী ৭২ সালের সংবিধান সম্পর্কেও তার মতামত ব্যক্ত করেন এবং বলেন, “৭২-এর সংবিধানের মাধ্যমে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা অসম্ভব।” তিনি বলেন, বহুদলীয় গণতন্ত্র একদলীয় সংবিধানের মাধ্যমে কখনো প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। “এ জন্য আমাদের বাধা দিলে সেই পরিণতি হবে শেখ হাসিনার মতো,” বলেন তিনি। 


এছাড়া, নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, “কেউ যদি দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে রাজপথে লড়াই হবে।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের স্পষ্ট কথা, বাংলাদেশে আমরা রক্ত দিয়েছি, প্রয়োজনে আবারও রক্ত দেব।” তার মতে, দেশের রাজনৈতিক কাঠামোকে পরিবর্তন করতে হলে এই রক্তপাতের দরকার হতে পারে, তবে তারা কখনও নিজেদের অবস্থান থেকে পিছু হটবেন না।


নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী একদলীয় সংবিধানের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেন এবং বলেন, “যে সংবিধান আমাদের ট্যাক্সের টাকা বিদেশে পাচার করেছে, অন্যায়ভাবে জেলে আটকে রেখেছে, এবং ৫৩ বছর ধরে নিপীড়ন করেছে, সেই সংবিধানকে আমাদের ছুঁড়ে ফেলতে হবে।” তার এই বক্তব্য সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ এবং প্রতিবাদের প্রতিফলন ছিল।


তিনি আরও বলেন, “এটি এখন সময়ের দাবি, যে সংবিধান একদলীয় শাসনের অধীনে থাকতে চায়, তাকে জনগণের পক্ষ থেকে প্রত্যাখ্যান করা হবে।” তার মতে, জনগণের ঐক্য এবং সংগ্রামই দেশের ভবিষ্যৎ রচনা করবে এবং এটি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।


এই সমাবেশে উপস্থিত ছাত্রদের প্রতি নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী আহ্বান জানান, যেন তারা দেশের উন্নতির জন্য এবং একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আরও বেশি সচেতন হয়ে ওঠে। তার মতে, জনগণের শক্তি এবং তাদের দাবিকে একত্রিত করে পরিবর্তন আনা সম্ভব। 


সবশেষে, তিনি বলেন, "গণপরিষদ নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উন্নয়নে কাজ করতে হবে, যেন কেউ দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি না করতে পারে।"