ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার বাজারগুলোতে মুরগির দামে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও মাছের বাজারে অস্থিরতা চরম আকার ধারণ করেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি ও চাষের মাছের দাম কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এতে সাধারণ ভোক্তারা পড়েছেন চরম বিপাকে।
সোমবার (২১ এপ্রিল) সকালে সরাইলের উচালিয়া পাড়া মোড়, কালিকচ্ছ ও শাহবাজপুর এলাকার বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। ক্রেতাদের অনেকেই জানালেন, আগে থেকেই গরু ও খাসির মাংসের দাম নাগালের বাইরে ছিল, এখন মাছের দাম বাড়ায় বাজারে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধায় পড়তে হচ্ছে—কি কিনবেন আর কি ছাড়বেন।
বাজারে সবচেয়ে বেশি মূল্যবৃদ্ধি দেখা গেছে দেশি জাতের মাছের ক্ষেত্রে। দেশি চিংড়ি বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭৫০–৮০০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৭০০–৭৫০ টাকা। চাষের চিংড়িও বেড়ে এখন ৬৫০–৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শিং ও টেংরা মাছের দাম ৬০০–৭০০ টাকায় পৌঁছেছে, যা আগে ছিল ৫০০–৬০০ টাকার মধ্যে। শোল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকায়, যেখানে এক সপ্তাহ আগে ছিল ৭৫০–৮০০ টাকা। রুই ও কাতলা মাছেও ৫০ টাকার মতো মূল্যবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। তবে তেলাপিয়া ও পাঙাশের মতো মাছের দাম স্থিতিশীল রয়েছে—১৮০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মুরগির বাজারে কিছুটা স্বস্তির হাওয়া। ব্রয়লার মুরগির দাম কমে ১৬০ টাকা কেজি হয়েছে, যা আগে ছিল ২০০ টাকা। সোনালি মুরগি ২৫০–২৭০ টাকায় এবং দেশি মুরগি ৬০০–৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগের তুলনায় ২০–৩০ টাকা কম।
উচালিয়া পাড়া বাজারের বিক্রেতা করিম মিয়া বলেন, “মাছের দাম দেখে অনেকে আবার মুরগির দিকে ঝুঁকছে। এতে বাজারে চাপ কিছুটা কমেছে।”
তবে গরু ও খাসির মাংসের দামে তেমন পরিবর্তন না এলেও তা এখনও সাধারণ ভোক্তাদের নাগালের বাইরে। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০–৮০০ টাকা, খাসির মাংস ১,১৫০ এবং ছাগলের মাংস ১,১০০ টাকা কেজি দরে।
মাছ কিনতে আসা চাকরিজীবী বাতেন বলেন, “গত সপ্তাহে রুই মাছ ৩০০ টাকায় কিনেছি, আজ সেটাই ৩২০–৩৫০ টাকা। গরু-খাসির মাংস তো আগেই নাগালের বাইরে ছিল, এখন মাছও কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে।”
একই রকম হতাশা প্রকাশ করেন গৃহিণী মাহফুজা। তিনি বলেন, “মাছের দিকে ঝুঁকেছিলাম, এখন সেটাও আর হাতের নাগালে নেই। মনে হচ্ছে সপ্তাহে একদিন মাছ খাওয়াও এখন বিলাসিতা হয়ে যাচ্ছে।”
ভোক্তারা বাজারে নজরদারি বাড়াতে সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। তারা বলছেন, মাছ-মাংস-ডিমের মতো প্রোটিনসমৃদ্ধ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে না আনলে সাধারণ মানুষের পুষ্টি ও জীবনযাত্রা উভয়ই হুমকির মুখে পড়বে।
বাজারের বিক্রেতারা জানান, মাছের চাহিদা থাকলেও উৎস অঞ্চল থেকে সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে এবং পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় দাম বাড়ানো ছাড়া তাদের উপায় নেই।