আশাশুনিতে বিদ্যুতায়িত শিশুকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
সচ্চিদানন্দ দে সদয়, আশাশুনি উপজেলা প্রতিনিধি, সাতক্ষিরা
প্রকাশিত: শুক্রবার ২৪শে জানুয়ারী ২০২৫ ১০:৩৬ অপরাহ্ন
আশাশুনিতে বিদ্যুতায়িত শিশুকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ

আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগরে এক শিশু বিদ্যুতায়িত হয়ে তার হাত-পা হারিয়ে ফেলেছে। তার এই শারীরিক ক্ষতির পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। গত বুধবার বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেন। ৩০ দিনের মধ্যে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চেয়ারম্যান ও প্রধান বিদ্যুৎ পরিদর্শককে এ ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।


এ ঘটনায় শিশু রাকিবুজ্জামানের বাবা মো. আব্দুর রাজ্জাক ঢালী ২০২১ সালের ২১ মার্চ বিদ্যুৎ বিভাগের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ করেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, ওই সময় তার বাড়ির উপর দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করা হয়েছিল, যা ছিল অব্যবস্থাপনা এবং নিয়ম বহির্ভূত। তার আবেদনের পরও বিদ্যুৎ বিভাগ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।


এর পর ৯ মে, ২০২১ সালে শিশু রাকিবুজ্জামান ঐ বিদ্যুৎ লাইনে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হওয়ার কারণে গুরুতরভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। চিকিৎসকরা বাধ্য হয়ে তার ডান হাতের বগলের অংশ এবং ডান পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ কেটে ফেলেন। এই ঘটনাটি রাকিবুজ্জামানের পরিবারে গভীর শোকের সৃষ্টি করে।


এ ঘটনায় ক্ষতিপূরণের জন্য ২৫ মে বিদ্যুৎ বিভাগে আবেদন করা হলেও কোনো প্রতিকার না পেয়ে ১০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন রাকিবুজ্জামানের বাবা। আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী এড. মুহম্মদ তারিক-উল ইসলাম ও ফরিদ হাসান মেহেদী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজ বিন ইউসুফ এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবীর রোমেল।


এর আগে, ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর, হাইকোর্ট শিশু রাকিবুজ্জামানকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য এক সপ্তাহের মধ্যে রুল জারি করেছিলেন। আদালত বলেছিল, শিশুটির চিকিৎসা সংক্রান্ত সব তথ্য এবং চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ জানাতে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালককে নির্দেশনা দেওয়া হবে।


শিশুর পরিবারের পক্ষে রিট দায়ের করা আইনজীবী এড. মুহম্মদ তারিকুল ইসলাম জানান, তাদের মূল দাবি ছিল ১০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ। রিটে তাদের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ বিভাগসহ বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছিল।  


এ ধরনের ঘটনাগুলোর কারণে দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার নিরাপত্তা ও কর্মপ্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে। আশাশুনির এই ঘটনাটি আরো একবার প্রমাণিত করল যে বিদ্যুৎ লাইনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।  


বর্তমানে, শিশু রাকিবুজ্জামান এবং তার পরিবার খুবই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তার চিকিৎসা এবং সুস্থতার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। আদালতের আদেশে ১০ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ এই পরিবারের জন্য কিছুটা সহায়ক হলেও, শিশুটির ভবিষ্যতের চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনের জন্য আরও অনেক সহায়তা প্রয়োজন।  


এছাড়া, আদালত ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছে যে, বিদ্যুৎ লাইনের সঠিকভাবে স্থাপন এবং নিরাপত্তার জন্য আরও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। স্থানীয়রা আশা করছেন, এই ধরনের আদেশ থেকে সরকার এবং বিদ্যুৎ বিভাগ আরও সতর্ক হবে এবং সারা দেশে বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনে অধিক নজরদারি চালাবে।  


এই ঘটনা শুধু আশাশুনি উপজেলার বা শুধু রাজ্জাক ঢালীর পরিবারের জন্য নয়, বরং এটি সারা দেশের জন্য একটি শিক্ষা, যে ভবিষ্যতে যাতে কোন পরিবার এমন দুর্ঘটনার শিকার না হয় এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা আরও সুরক্ষিত এবং সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হয়।