জুলাই ঘোষণাপত্র চায় না বিএনপি তবে জামাত বলেন প্রয়োজনীয়তা আছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
মোঃ সাইফুল ইসলাম, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: শুক্রবার ১৭ই জানুয়ারী ২০২৫ ১১:৫৩ পূর্বাহ্ন
জুলাই ঘোষণাপত্র চায় না বিএনপি তবে জামাত বলেন প্রয়োজনীয়তা আছে

অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের সাড়ে পাঁচ মাস পর ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’ প্রণয়নের উদ্যোগকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার ঝড় উঠেছে। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এক সর্বদলীয় বৈঠকে এ বিষয়ে মতামত প্রদান করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বানে আয়োজিত এ বৈঠকে অংশ নেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদসহ আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের প্রতিনিধিরা। বৈঠকের মূল আলোচ্য ছিল ঘোষণাপত্র প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা ও এর গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করা।


বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ প্রশ্ন তোলেন, সাড়ে পাঁচ মাস পর এই ঘোষণাপত্রের প্রয়োজন কেন? তিনি উল্লেখ করেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যে যেন কোনো ফাটল না ধরে, সেদিকে সরকারের বিশেষ নজর দেওয়া উচিত। অন্যদিকে, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ঘোষণাপত্র প্রয়োজন, তবে তা অবশ্যই সর্বসম্মতিক্রমে হওয়া উচিত। অন্যান্য দলগুলোর পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে ঐকমত্যের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।


বৈঠকে অংশগ্রহণকারী আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, সর্বসম্মতিক্রমে একটি গ্রহণযোগ্য দলিল প্রণয়নের জন্য সময়ের প্রয়োজন। একইসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, দ্রুততার চেয়ে সবার মতামত নিয়ে একটি কার্যকর দলিল প্রণয়ন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাবও দেন তিনি। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই ধরনের দলিল ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, তবে তা সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে করা উচিত।


জামায়াতে ইসলামীর মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, তাদের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে, তিনি উল্লেখ করেন, জাতীয় ঐক্য যেন কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি এবং গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ মামুন ঘোষণাপত্র প্রণয়নের পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তারা জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে দলিল প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। 


বৈঠকে উপস্থিত থাকা অন্যদের মধ্যে ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ মার্কসবাদী), এবং খেলাফত মজলিসের প্রতিনিধিরাও আলোচনায় অংশ নেন। তাদের বক্তব্যে ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যের গুরুত্ব ও ঐক্য ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। বৈঠক শেষে বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা আশাবাদ প্রকাশ করেন, ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যকে সুসংহত করা সম্ভব হবে।


তবে, বৈঠকটি নিয়ে কিছু বিতর্কও দেখা দেয়। আমন্ত্রণ না পাওয়ার কারণে সিপিবি এবং ১২ দলীয় জোট অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স দাবি করেন, বৈঠকের আমন্ত্রণ ও ঘোষণাপত্র তাদের কাছে দেরিতে পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে, ১২ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, বৈঠকে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, যা তাদের অবমূল্যায়ন বলে তারা মনে করছে।


বিএনপির প্রতিনিধি সালাহউদ্দিন আহমদ বৈঠকে তাদের পরামর্শ তুলে ধরে বলেন, ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে যেন জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি মজবুত করা যায়, সেদিকে নজর দেওয়া উচিত। তিনি আরো উল্লেখ করেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর জাতীয় ঐক্যই দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির চালিকাশক্তি হওয়া উচিত। 


গণঅধিকার পরিষদ এবং গণসংহতি আন্দোলনের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে সমর্থন জানানো হয়। তাদের মতে, ঘোষণাপত্র প্রণয়নের জন্য একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা যেতে পারে। অন্যদিকে, হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, শাপলা চত্বরের গণহত্যার ঘটনাও ঘোষণাপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। 


ঘোষণাপত্র নিয়ে বৈঠক থেকে প্রাপ্ত অভিমতগুলো সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা হতে পারে বলে মতামত দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যকে আরও দৃঢ় করা সম্ভব হবে। বৈঠক শেষে তিনি উপস্থিত সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। 


সর্বশেষে, বৈঠকের পর বিভিন্ন পক্ষের মতামত নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। জাতীয় ঐক্য ধরে রেখে একটি গ্রহণযোগ্য দলিল প্রণয়নই বর্তমান সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।