আসছে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ঘরে বাইরে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ মেটানো বড় চ্যালেঞ্জে রয়েছে টানা রাষ্টীয় ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগ। অথচ সম্মেলন অনুষ্ঠানের এক বছর অতিবাহিত হয়েছে পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনেই।
তবুও নাটোরের লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। তিন বছর মেয়াদি এ উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে এক বছর ধরে সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এই চারজন দিয়ে চলছে সাংগঠনিক কর্মকান্ড। কবে নাগাদ পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হবে সেটিও নিশ্চিত করে কেউ বলছে না। ইতিমধ্যে কমিটির এই চারজন নেতাও তিন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। ফলে সাংগঠনিক কার্যক্রমে অনেকটাই স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাড. আবুল কালাম আজাদের পক্ষ নিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন ঝুলফু, বর্তমান সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের পক্ষ নিয়েছেন সহ-সভাপতি আ.স.ম মাহামুদুল হক মুকুল ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম জয়। আর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ সাগর নিজেই আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছে। এতে ক্ষোভ আর হতাশা প্রকাশ করেছেন পদপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগের তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা।
পদপ্রত্যাশী একাধিক নেতাকর্মী বলছেন, ৭১ সদস্য বিশিষ্ট আওয়ামী লীগের কমিটি। পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন না করে চারজন নেতা চালাছে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম। তারা পৃথক-পৃথক ভাবে উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে যে যার মতো ইচ্ছা তাকে নিয়ে দলীয় কর্মসূচি পালন করছে। অনেক নেতাকর্মীই দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহন করে না। দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী মূল্যায়নও হয় না। এতে তৃণমূলের ত্যাগী নেতারা কোন দিকে যাবেন তাই নিয়ে হতাশায় রয়েছেন।’
সূত্র বলছে, দীর্ঘ আট বছর পর ২২ সালের ২৭ জুলাই লালপুর ডিগ্রি কলেজ মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে জেলা কমিটির সভাপতি ও নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো. আবদুল কুদ্দুস উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্বের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। সম্মেলনের প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করর্পোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন নতুন কমিটির সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এই চারজনের নাম ঘোষণা করেন। এছাড়া ৭১ সদস্যের উপজেলা কমিটির অন্যান্য পদের নামসহ শিগগিরই অনুমোদিত কমিটি দেওয়া হবে জানানো হয়। কিন্তু বছর পেড়িয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষনা দেওয়া হয়নি।’
উপজেলা আ’লীগের সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ও সহ-সভাপতি পদপ্রত্যাশি আনিসুজ্জামান বাবু বলেন, আওয়ামী লীগের মতো এতো বড় সংগঠন পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছাড়া এভাবে চলতে পারে না। লালপুর থানায় এই প্রথম সম্মেলন হওয়ার একছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। আমরা খুব বিব্রত অবস্থায় রয়েছি। পুরো একটা অসাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতার কারনেই কমিটি হচ্ছে না বলে মনে করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সংগঠনিক অবস্থা একেবারেই নাজুক। ’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক এ্যাড. আলাউদ্দিন আলাল বলেন, সম্মেলনের এক বছরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় কারনে কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সদিচ্ছা না থাকায় কমিটি হচ্ছে না। পদবাণিজ্যসহ পকেট কমিটি গঠনের ষড়যন্ত্র চলছে।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ সাগর বলেন, সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক মিলে গত নভেম্বর মাসেই আমরা জেলা আওয়ামী লীগের কাছে কমিটি জমা দিয়েছি। কেন কমিটি অনুমোদন হচ্ছে না, তা জেলা আওয়ামী লীগই বলতে পারবে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় সকল নেতাকর্মীকে একত্রে আনা যাচ্ছে না। ’
নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান গ্রুপিংয়ের কথা স্বীকার করে বলনে, দলে প্রতিযোগিত আছে। প্রতিযোগিতা থাকবে। গ্রুপিং থাকলে কর্মীদের মূল্যায়ন হয়। তবে দলে কোন স্থবিরতা নেই। আমাদের কাছে কমিটি জমা আছে। সভাপতি দেশের বাহিরে ছিলেন। আগামী মাসে কমিটি অনুমোদন দেওয়া হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।