প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৫, ১২:৩০
ভারতের আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সম্প্রতি এক বিস্ময়কর মন্তব্যে বাংলাদেশের ভূগোলকে ঘিরে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ পোস্ট করা একটি মানচিত্রের মাধ্যমে তিনি দাবি করেছেন, বাংলাদেশেও দুটি ‘চিকেন নেক’ করিডোর রয়েছে, যেগুলো ভারতের শিলিগুড়ি করিডোরের চেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
রোববার ওই পোস্টে হিমন্ত শর্মা লেখেন, বাংলাদেশে উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে দুটি সংকীর্ণ করিডোর আছে। তার ভাষায়, উত্তর করিডোরটি দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে শুরু হয়ে রংপুর বিভাগের সংযোগ তৈরি করেছে, যা প্রায় ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ। যদি এই করিডোরটি বিঘ্নিত হয়, তবে রংপুর বিভাগ বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দ্বিতীয় করিডোর সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি চট্টগ্রাম করিডোর নামে পরিচিত এবং মাত্র ২৮ কিলোমিটার প্রশস্ত। এই পথ ঢাকার সঙ্গে দেশের বাণিজ্যিক কেন্দ্র চট্টগ্রামের সরাসরি সংযোগ স্থাপন করে, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভারসাম্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এই বক্তব্যের মাধ্যমে হিমন্ত মূলত ভারতের শিলিগুড়ি করিডোর নিয়ে করা সমালোচনার জবাব দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ভারতের ‘চিকেন নেক’ নিয়ে যারা হুমকি দেয়, তারা যেন মনে রাখে প্রতিবেশী দেশেও এমন ভূ-ভাগ আছে যা একইভাবে দুর্বল এবং বিচ্ছিন্ন হবার সম্ভাবনা রাখে।
হিমন্ত শর্মার এই মন্তব্য কেবল সামাজিক মাধ্যমে আলোচনার জন্ম দেয়নি, বরং কূটনৈতিকভাবে তা নতুন প্রশ্নও তুলেছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া এখনো না এলেও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এমন মন্তব্য দুই দেশের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।
ভারতের ‘চিকেন নেক’ নামে পরিচিত শিলিগুড়ি করিডোরটি দেশের মূল ভূখণ্ডকে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত করে এবং এটি ২০ কিলোমিটার প্রশস্ত। এই করিডোর ঘিরে নিরাপত্তা ও ভূরাজনৈতিক স্পর্শকাতরতা নিয়ে বরাবরই আলোচনার কেন্দ্রে ছিল।
বাংলাদেশের ভেতরের করিডোর নিয়ে ভারতের একজন মুখ্যমন্ত্রীর প্রকাশ্য মন্তব্য কেবল অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ হিসেবেই দেখা হচ্ছে না, বরং তা ভবিষ্যতের ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলেও মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে এই ইস্যু কতটা প্রভাব ফেলবে তা এখনো স্পষ্ট নয়, তবে এমন বক্তব্য দুই দেশের সীমান্ত ঘেঁষা অঞ্চলগুলোতে উদ্বেগ বাড়াতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।