প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:২২
ভারতের উত্তরপ্রদেশের বেয়ারেলিতে শুক্রবার জুমার নামাজের পর ইসলামিয়া ময়দানে ব্যাপক ভিড় দেখা যায়। স্থানীয় আলেম ও ইত্তেহাদ-ই-মিল্লাত কাউন্সিলের প্রধান মাওলানা তৌকীর রাজার আহ্বানে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশটি মূলত ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ প্রচারণার সমর্থনে আয়োজন করা হয় এবং মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য প্রদর্শনের উদ্দেশ্য বহন করে।
ঘটনার সূত্রপাত কানপুর থেকে, যেখানে গত ৪ সেপ্টেম্বর ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী শোভাযাত্রার সময় একটি তাঁবুর ওপর ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ পোস্টার টাঙানো হয়। পুলিশ তা সরিয়ে দেয় এবং ৯ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫ অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে। এ ঘটনার জেরে গোটা দেশে প্রতিবাদ শুরু হয় এবং বেয়ারেলিতেও তা পৌঁছে।
শুক্রবারের সমাবেশে পুলিশি উপস্থিতি ছিল, কিন্তু ভিড় ক্রমশ বাড়তে থাকে। অংশগ্রহণকারীরা উসকানিমূলক স্লোগান দিতে শুরু করে এবং কিছুক্ষেত্রে পাথর ছোঁড়ার ঘটনাও ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। ঘটনাস্থলে ছড়িয়ে থাকে জুতা, স্যান্ডেল ও ইটপাটকেল, যা উত্তেজনার মাত্রা আরও বৃদ্ধি করে।
পুলিশি অভিযান ও লাঠিচার্জে অন্তত ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বেয়ারেলির আইজি অজয় সাহনি জানিয়েছেন, দশজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, পুলিশ ফ্ল্যাগ মার্চ করছিল এবং সবাইকে নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার অনুরোধ করা হয়েছিল, কিন্তু ভিড় থেকে গুলি চালানো এবং পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। তিনি এটিকে পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
সমাবেশে সাধারণ মুসলমানরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দাবিসমূহ জানিয়েছেন। তারা মূলত ধর্মীয় অনুভূতি রক্ষা ও ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ প্রচারণার সমর্থন দেখানোর জন্য সমবেত হয়েছিলেন। তবে কিছু উস্কানিমূলক কার্যকলাপ পরিস্থিতি উত্তেজিত করে তোলে।
সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব লাঠিচার্জকে সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেছেন, সরকার পরিচালিত হয় সম্প্রীতি ও সদিচ্ছার মাধ্যমে, লাঠিচার্জ দিয়ে নয়। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানান।
বেয়ারেলি ঘটনার প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মীয় অনুভূতি ও প্রশাসনের মধ্যকার সংবেদনশীলতার প্রতি নজর দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আরও প্রকট হয়েছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা, শান্তি এবং ধর্মীয় অধিকার রক্ষার পাশাপাশি প্রশাসনের সতর্কতা ও সংযম প্রদর্শন অত্যন্ত জরুরি।
উক্ত ঘটনা ভারতের বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদের ঢেউ জাগিয়ে তুলেছে। এতে দেখানো হয়েছে যে ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি সামাজিক ও রাজনৈতিক সংবেদনশীলতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার ও পুলিশি বাহিনীকে এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।