প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৫, ১০:৪১
ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে আটক ৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে কোনো আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে বিস্ফোরক অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত রোহিঙ্গারা জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের নিবন্ধিত শরণার্থী ছিলেন এবং তাদের মধ্যে কিশোর-কিশোরী, বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তিরাও ছিলেন।
ভুক্তভোগীদের স্বজনদের অভিযোগ, দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল শুধুই বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করা হবে। কিন্তু পরবর্তীতে তারা আর কেউ ফিরে আসেনি। আমিনা নামে এক রোহিঙ্গা নারী জানান, তার ভাই বিশ্বাস করে পুলিশের সঙ্গে গিয়েছিল, কিন্তু আর ফেরেনি। তিনি বলেন, “পথে বাবা-মাকে কবর দিয়ে সে ভারতে এসেছিল, আর এখন তার খোঁজ নেই।”
৬ মে রাতে দিল্লির উত্তম নগর, বিকাশপুরি ও হাসতসাল এলাকা থেকে আটক রোহিঙ্গাদের প্রথমে ইন্দরলোক ডিটেনশন সেন্টারে নেওয়া হয়, পরে ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি জাহাজে করে তাদের আন্দামান নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, সেখান থেকে আন্তর্জাতিক জলসীমায় নিয়ে একে একে সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয়।
এই ঘটনা সামনে আসার পর ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন দায়ের করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, আটক ব্যক্তিদের সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আদালতে পেশ করা হয়নি, যা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ইউএনএইচসিআরের আইন কর্মকর্তা দিলোয়ার হোসাইন জানান, এই রোহিঙ্গাদের সঙ্গে নির্মম প্রতারণা করা হয়েছে, এমনকি নারী ও শিশুর ক্ষেত্রেও কোনো বিশেষ আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়নি।
এক রোহিঙ্গা নারী জানান, তার স্বামীকে তুলে নেওয়া হয় গর্ভপাতের পরপরই। আরেকজন অভিযোগ করেন, তিন পুলিশ সদস্য মদ্যপ অবস্থায় তার ঘরে ঢুকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেন। পরে জানা যায়, ৪০ জন রোহিঙ্গার চোখ ও হাত-পা বেঁধে পোর্ট ব্লেয়ারে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখান থেকে আন্তর্জাতিক জলসীমায় ফেলে দেওয়া হয়।
যাত্রাপথে রোহিঙ্গাদের প্রশ্ন করা হয়েছিল তারা মিয়ানমার না ইন্দোনেশিয়া যেতে চায়। তারা জানান, মিয়ানমারে ফিরে গেলে নির্যাতনের শিকার হবে। তবু কারও কথা শোনা হয়নি। পরে প্রায় ১২ ঘণ্টা সাঁতরে মিয়ানমারের তানিনথারি অঞ্চলে পৌঁছান কয়েকজন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত ১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশনের সদস্য না হলেও ‘কনভেনশন এগেইনস্ট টর্চার’-এর সদস্য হওয়ায় এই কাজ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। সিনিয়র আইনজীবী কলিন গনসালভেস বলেন, “তাদের নাগরিকত্ব নেই, অপরাধের অভিযোগ নেই, তাহলে কেন এই নির্মমতা? কেবল মুসলমান বলেই কি তাদের প্রতি এমন আচরণ?”
জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা তাদের মিয়ানমার ইউনিটের মাধ্যমে এখনো নিখোঁজদের সন্ধান করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আটক ৪০ জন রোহিঙ্গার সঙ্গেই আর কোনো যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। ভারত সরকার বলেছে, বিষয়টি বিচারাধীন থাকায় এখনই মন্তব্য করা যাচ্ছে না।