প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৫, ১১:৩৯
জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পুনরাবৃত্তি হলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ও প্রত্যক্ষ পদক্ষেপ নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রাহ্মনিয়াম জয়শঙ্কর। তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, প্রয়োজনে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ঢুকেও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাবে ভারত।
মঙ্গলবার (১০ জুন) বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে জয়শঙ্কর বলেন, ‘আমরা সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সহাবস্থানে বিশ্বাস করি না। যদি আবার এমন হামলা ঘটে, তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিশোধ নেওয়া হবে। সন্ত্রাসীরা যেখানে থাকুক না কেন, আমরা সেখানে গিয়ে আঘাত করব, এমনকি সীমান্ত পেরিয়েও।’
ভারতের এই কড়া অবস্থানের পেছনে মূল কারণ ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগাম এলাকায় ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলা, যেখানে ২৬ জন হিন্দু পর্যটক নিহত হন। ওই হামলার দায় স্বীকার করে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ নামে একটি জঙ্গিগোষ্ঠী। গোয়েন্দা সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, এই গোষ্ঠী পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মিরভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার একটি শাখা।
এই হামলার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয়। সিন্ধু নদীর পানি বণ্টনচুক্তি পর্যালোচনা, পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল এবং অন্যান্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়। পাল্টা হিসেবে পাকিস্তানও ভারতের আকাশসীমা বন্ধ এবং ভিসা বাতিল করে।
দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ার প্রেক্ষাপটে ৭ মে ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে সীমান্তবর্তী কাশ্মির অঞ্চলে অভিযান চালায়, যেখানে ৭০ জন সন্ত্রাসী নিহত হয় বলে দাবি করেছে নয়াদিল্লি। পাকিস্তানের দাবি নিহতের সংখ্যা কম এবং সেখানে সেনা ও সাধারণ লোকজনও নিহত হয়েছেন।
৯ মে পাকিস্তান পাল্টা ‘অপারেশন বুনিয়ান উম মারসুস’ চালায়, যা ভারতীয় সীমানায় আক্রমণ হিসেবে চিহ্নিত হয়। এতে বহু নিহত এবং আহত হয়েছে। এরপর ১০ মে থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে, তবে উত্তেজনা এখনো কমেনি।
এই পরিস্থিতিতে ভারত আন্তর্জাতিক মঞ্চে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের চেষ্টা জোরদার করেছে। ইউরোপ সফরের অংশ হিসেবে জয়শঙ্কর ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দেন। তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিক্রিয়া হবে কঠোর এবং নির্দয়। নিজের নিরাপত্তা রক্ষায় প্রয়োজন হলে সীমান্ত অতিক্রম করতেও আমরা পিছপা হব না।’
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এখন কেবল সামরিক নয়, কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। এই সংকটের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই এখন প্রধান লক্ষ্য।