অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশি-বিদেশি সাংবাদিক ও ভুক্তভোগীদের নিয়ে ঢাকার কচুক্ষেত, উত্তরা ও আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ডিজিএফআই ও র্যাবের আয়নাঘর পরিদর্শন করেন। বুধবার সকালে এই পরিদর্শনের সময় তার সঙ্গে ভারতীয় সাংবাদিকরাও ছিলেন। পরিদর্শন শেষে সাংবাদিক অর্ক দেব আয়নাঘরের একটি ইলেকট্রিক চেয়ারের ছবি পোস্ট করে জানান, এটি ‘হাই ভ্যালু’ বন্দিদের নির্যাতনের জন্য ব্যবহার করা হতো। তিনি লেখেন, ডিজিএফআইয়ের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট এই নির্যাতন কেন্দ্র পরিচালনা করত এবং সারাক্ষণ একজস্ট ফ্যান চলত যাতে ভেতরের কান্না ও গোঙানির শব্দ বাইরে শোনা না যায়।
অর্ক দেব আরও জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনীতিক মাইকেল চাকমা একাধিক বছর এসব আয়নাঘরে বন্দি ছিলেন। তার মতে, বন্দিদের জন্য নির্ধারিত সেলগুলোয় সিসিটিভি ক্যামেরার নজরদারির মধ্যে নির্যাতন চালানো হতো। তিনি জানান, একেকজন বন্দিকে একাধিক সেলে বিভিন্ন সময় আটকে রাখা হতো এবং দীর্ঘদিন নির্যাতন সহ্য করতে হতো।
পরিদর্শন শেষে অধ্যাপক ইউনূস আওয়ামী লীগ শাসনামলকে ‘আইয়ামে জাহিলিয়াতের’ সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশজুড়ে এমন অসংখ্য টর্চার সেলের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, যার সঠিক সংখ্যা এখনও নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। কেউ বলছে ৭০০, কেউ বলছে ৮০০, তবে নির্যাতনের প্রকৃত পরিসর আরও বড় হতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, গুম কমিশনের প্রতিবেদনে আয়নাঘরের সমস্ত তথ্য নথিভুক্ত করা হবে এবং এই নির্যাতন কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার করা হবে। তিনি বলেন, এসব প্রমাণ সংরক্ষণ করে ভবিষ্যতে দায়ীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে।
অধ্যাপক ইউনূসের মতে, গুম কমিশনের তদন্তে আরও নতুন তথ্য উঠে আসবে এবং আয়নাঘরের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলেও আলোচিত হবে। এ ধরনের গোপন নির্যাতন কেন্দ্র পরিচালনা মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরম উদাহরণ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও আয়নাঘরের ঘটনা তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এ বিষয়ে আরও বিশদ প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোও এই পরিদর্শনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
এদিকে, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারের সদস্যরা আয়নাঘরের পরিদর্শনের খবর শুনে আরও তথ্য প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। তারা চাইছেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক এবং ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হোক।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।