ভারতের উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ মেলায় পদদলনের ঘটনায় অন্তত ৭ জন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পূণ্যার্থী জনতা গঙ্গাস্নানের উদ্দেশ্যে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই গঙ্গা নদীর তীরে ভিড় করতে থাকেন। বুধবার সূর্য ওঠার আগেই স্নান সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা থাকায় প্রচণ্ড ভিড়ের সৃষ্টি হয়, যার মধ্যে হঠাৎ পদদলনের ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। রয়টার্সের কাছে থাকা ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, আহত ও নিহতদের স্ট্রেচারে করে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে এবং তীরে অ্যাম্বুলেন্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, হঠাৎ হৈ চৈ শুরু হয়, নারী ও শিশুরা চিৎকার করতে থাকে এবং আতঙ্কিত জনতা ছোটাছুটি করে, যার ফলে হতাহতের সংখ্যা বাড়ে। মঙ্গলবার ছিল মৌনী অমাবস্যা, যা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র দিন হিসেবে বিবেচিত হয়। তারা বিশ্বাস করেন, প্রয়াগরাজে গঙ্গা, যমুনা ও স্বরস্বতী নদীর সঙ্গমস্থলে স্নান করলে অশেষ পূণ্য লাভ হয়। এই কারণে বিপুলসংখ্যক পূণ্যার্থী এখানে সমবেত হয়েছিলেন।
এ ঘটনার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে ফোন করে আহতদের চিকিৎসার নির্দেশ দেন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার পরামর্শ দেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আহতদের দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে অতিরিক্ত ভিড় সামলাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনো ঘাটতি ছিল কিনা, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
কুম্ভ মেলা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সমাবেশগুলোর একটি, যা প্রতি ১২ বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয়। তবে এবারের মেলাটি মহাকুম্ভ মেলা, যা ১৪৪ বছর পর পর আয়োজিত হয়। এটি শুরু হয়েছে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে এবং চলবে আরও চার সপ্তাহ। সরকারি তথ্যমতে, এবারের মেলায় ভারত, নেপালসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অন্তত ১৪ কোটি ৮০ লাখ পূণ্যার্থী অংশ নিয়েছেন।
উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন বলছে, তারা পদদলনের ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। আহতদের চিকিৎসার খোঁজখবর নিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠানে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে আরও কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত ভিড় সামলানোর জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনা না থাকলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আগেও কুম্ভ মেলায় পদদলনের ঘটনা ঘটেছে, তাই এবার প্রশাসনের সতর্কতা আরও বেশি থাকার কথা ছিল।
মহাকুম্ভ মেলার মতো বিশাল আয়োজনে জননিরাপত্তার বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে অমাবস্যার রাতে গঙ্গাস্নানের সময় মানুষের চাপে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই নিরাপত্তা ব্যবস্থার আরও উন্নতি করা দরকার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।