প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ৫:২
আজ ইতিহাসের সেই নির্মম কালো ৯/১১ দিন। যা ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এ দিনে ভয়াবহ আত্মঘাতী বিমান হামলা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সন্ত্রাসী হামলায় টুইন টাওয়ার ধ্বংস এবং ভার্জিনিয়ায় পেন্টাগন ভবন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনাটি ঘটে। হামলায় নিহত হয় প্রায় ৩ হাজার মানুষ।উসামা বিন লাদেন এবং আল-কায়দা এ হামলা চালিয়েছে দাবি করে এরপর থেকে বিশ্বব্যাপি সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু করে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট।সেদিন ছিল ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। অন্যদিনের মতোই জেগে উঠেছিল নিউইয়র্ক সিটি। কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেছিল বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রাণকেন্দ্র নিউইয়র্ক সিটি।
স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৪৬ মিনিটে ঘটে সেই ভয়াল ঘটনা। মুহূর্তেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। ‘টুইন টাওয়ার’ হিসেবে পরিচিত বিশ্বের অন্যতম উঁচু দালানটিতে আঘাত হানে সন্ত্রাসীদের দখল করা দুটি যাত্রীবাহী বিমান। মুহূর্তের মধ্যেই নিউইয়র্কের নীলাকাশে ঢেকে গেল নিকষ কালো ধোঁয়ায়। সবার চোখের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ল যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক গৌরবের প্রতীক ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক গৌরবের প্রতীক ওয়াশিংটনের পেন্টাগন ভবনেও হামলা চালায় আরেকটি বিমান। এ ছাড়া পেনসিলভানিয়ায় আরেকটি বিমান দিয়ে হামলার চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
এই পুরো হামলা চালাতে সেদিন সকালে ১৯ জন ছিনতাইকারী চারটি বাণিজ্যিক বিমানের (দুটি বোয়িং ৭৫৭ ও দুটি বোয়িং ৭৬৭) নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। তাদের সবাই নিহত হয়। এ ছাড়া টুইন টাওয়ার ও এর আশপাশে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে ৩৪৩ জন দমকল কর্মী ও ৬০ পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২ হাজার ৭৪৯ জন প্রাণ হারান। নিহতদের বেশির ভাগই বেসামরিক ব্যক্তিবর্গ, নারী ও শিশু। পেন্টাগনে আত্মঘাতী বিমান হামলায় তখন ১৮৪ জন নিহত হন। এছাড়া, উদ্ধারকাজ চালাতে গিয়ে যারা আহত, অসুস্থ এবং বিষক্রিয়ার শিকার হয়েছিলেন তাদের মধ্যে ৮৩৬ জন পরে মৃত্যুবরণ করেন।
এই একটি ঘটনা পাল্টে দেয় গোটা যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা। দীর্ঘদিন ধরে এ হামলার জের টানতে হয় যুক্তরাষ্ট্রকে। ওই হামলায় ক্ষতি হয় ৫ থেকে ১০ হাজার কোটি ডলারের। শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, নাইন-ইলেভেনের প্রভাব পড়েছিল সারা বিশ্বেও। এজন্য মাশুল গুনতে হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশকে। যুক্তরাষ্ট্রের চাপিয়ে দেওয়া সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধে ইরাক, আফগানিস্তানকে দিতে হয়েছে চড়া মূল্য।অবশ্য, গত ১৯ বছরে ওয়ান-ইলেভেনের বড় বিপর্যয় থেকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে আমেরিকা।
ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞের ওপর আবার গৌরবের সঙ্গে দাঁড়িয়েছে ফ্রিডম টাওয়ার। বিশাল বাজেট হাতে নিয়ে এর নির্মাণ শুরু হয় ২০০৬ সালের ২৭ এপ্রিল। প্রায় ৩.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয় এই ভবনটি নির্মাণে। এবার এটির নিরাপত্তার জন্য রয়েছে আরও অনেক অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। যে কোনো বিমান এর দিকে ছুটে এলেই শক্তিশালী রাডারের নিখুঁত গণনায় সেটিকে ভূপাতিত করার অত্যাধুনিক ব্যবস্থা এতে রাখা হয়েছে। ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনায় বিশ্ববাসী মর্মাহত হয়েছিল। আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ এ হামলাকে ‘আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ আখ্যায়িত করে সৌদী ভিন্নমতাবলম্বী উসামা বিন লাদেন এবং তার আল-কায়েদা নেটওয়ার্ককে এর জন্য দায়ী করেন।
ওসামা বিন লাদেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটি পবিত্র যুদ্ধের ঘোষণা দেন এবং মার্কিনীদের হত্যার জন্য বিন লাদেন ও অন্যান্যদের ১৯৯৮ সালে একটি ফতোয়া স্বাক্ষরকে তদন্ত কর্মকর্তারা তার উদ্দেশ্য হিসেবে উল্লেখ করে থাকে।২০০২ সালের নভেম্বরে বিন লাদেনের "লেটার টু আমেরিকা"-তে তিনি তাদের হামলা সম্পর্কিত আল-কায়েদাদের উদ্দেশ্য ব্যাখা করেন, তন্মধ্যে রয়েছে:
১. ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন।
২. সোমালিয়ায় মুসলমানদের বিরুদ্ধে হামলায় সমর্থন।
৩. লেবাননে মুসলমানদের বিরুদ্ধে আগ্রাসনে ইসরায়েলকে সমর্থন।
৪. সৌদি আরবের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর উপস্থিতি।
৫. চেচনিয়ায় মুসলমানদের বিরুদ্ধে একনায়কতন্ত্রে রুশদের সমর্থন।
৬. মুসলমানদের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যে প্রো-মার্কিন সরকার কাশ্মীরে ভারতকে মুসলমানদের শোষণের বিরুদ্ধে সমর্থন।
৭. মরো সংঘর্ষে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ফিলিপাইনকে সমর্থন।
মার্কিনি প্রতিক্রিয়াঃ