ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক যেকোনো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের চেয়েও গভীর বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি বলেছেন, অন্য দেশের মতো বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক শুধু ভ্রাতৃপ্রতিম বা বন্ধুত্বপূর্ণই নয়, এটি আরও গভীর। বিশেষ করে, বাংলাদেশ সৃষ্টিতে ভারতের ভূমিকার কারণে।গতকাল সোমবার ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে বাংলাদেশে কর্মরত ভারতের শীর্ষ নির্বাহীদের এক অনলাইন আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন।
ভারতের বিদায়ী হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাশের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম। এতে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর এক ডজনেরও বেশি শীর্ষ কর্মকর্তা অংশ নেন।সালমান এফ রহমান বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও যতোটা প্রচার হওয়ার কথা ছিল, ততোটা হয়নি।
‘যদি দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ ঘটে, তখন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও বৃদ্ধি পায়। এটি দুই দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতার সম্পর্ক নয়, বরং একে-অপরের সহযোগী হওয়ার বিষয়। আর ভারতের ক্ষেত্রে এই কথা আরও বেশি প্রযোজ্য, কেননা দুই দেশের মধ্যে এক ঐতিহাসিক সম্পর্ক বিদ্যমান।’-যোগ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর শীর্ষ নির্বাহীরা ভারতের পারাদ্বীপ ও হালদা বন্দর থেকে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে সরাসরি পণ্য পরিবহন সহজ করার সুপারিশ করেন। এটি করা গেলে দুই দেশের বাণিজ্য আরও সহজ ও অর্থ সাশ্রয়ী হবে এবং চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর পণ্য পরিবহনে চাপ কমবে বলেও মন্তব্য করেন তারা।সালমান এফ রহমান তাদের সুপারিশটি উচ্চ পর্যায়ে উত্থাপনের আশ্বাস দেন। রেলপথে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড বেগবান করতে ভারতের সংশ্লিষ্ট রেলওয়ে অবকাঠামো উন্নত করারও আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে ভারতের ব্যবসায়ীদের নানা সমস্যা তুলে ধরেন বিদায়ী হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাশ। বিশেষ করে নন-ট্যারিফ প্রতিবন্ধকতা, কাস্টমস সংক্রান্ত জটিলতা, ভারত থেকে আমদানিকৃত গাড়ির সিসি-সীমা, ভারতীয় ব্যবসায়ী ও নির্বাহীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ভিসা, ইত্যাদি প্রসঙ্গ তোলেন তিনি। ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও বিভিন্ন প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। এছাড়া লেটার অব ক্রেডিট-এর বিপরীতে অর্থ পরিশোধে বিলম্বের প্রসঙ্গ আলোচনায় গুরুত্ব পায়।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এ সময় ভারতীয় দূত ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের এসব বিষয় সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিগোচরে আনবেন বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।বাংলাদেশ থেকে লভ্যাংশ ভারতের মূল কোম্পানিতে পাঠাতে জটিলতা দেখা দিয়েছে মর্মে এক অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপদেষ্টা বলেন, এই ধরনের বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা হয়তো আছে। তবে বাংলাদেশের যতটুকু উদারীকরণ এই পর্যায়ে দরকার, ততটুকু আমরা করে ফেলেছি।
সালমান এফ রহমান আরও ব্যাখ্যা করে বলেন, যেহেতু দুই দেশের মুদ্রা বিনিময়যোগ্য (কনভার্টিবল) নয়, সেহেতু কিছু জটিলতা থাকবেই। তার ভাষ্য, আগে আমাদের এত বড় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল না, যার কারণে সমস্যা হতো। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অনেক বেড়েছে। বিদেশি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখন ঝামেলাহীনভাবে তাদের লভ্যাংশ দেশে পাঠাতে পারে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের শুভেচ্ছা দূত হতে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, আপনারা নিজ দেশে, নিজেদের সহকর্মী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আপনাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করুন ও দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ যে কত নিবিড়, তা প্রচার করুন।