প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২৩
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে সাংবাদিক মেহেদী হাসানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ ভিত্তিহীন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম জেটিও-তে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে তিনি অভিযোগগুলোকে ভুল তথ্য হিসেবে আখ্যা দেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে হিন্দুবিদ্বেষী কোনো সহিংসতার ঘটনা নেই। বরং এসব অভিযোগ বাস্তবতা বিকৃত করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভিন্ন চিত্র তুলে ধরছে। তিনি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন যে, বর্তমানে ভারতে ভুয়া খবর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে, আর এ ধরনের ভুল তথ্য বাংলাদেশকেও প্রভাবিত করছে।
গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিতে হয়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জনগণের অনুরোধেই তিনি এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
ইউনূস জানান, প্রথমে তিনি দায়িত্ব নিতে রাজি ছিলেন না। তবে যখন তিনি দেখলেন মানুষ গণতন্ত্রের জন্য ত্যাগ স্বীকার করছে, তখন মত বদলান। তাঁর ভাষায়, যদি জনগণ এত ত্যাগ স্বীকার করতে পারে, তবে আমিও তাদের ডাকে সাড়া দিতে পারি।
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনাও হয়। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত হওয়া এবং তার পেছনের কারণগুলো নিয়ে তিনি সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তর দেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখতে এবং সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।
এছাড়া রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও মত প্রকাশ করেন ড. ইউনূস। তিনি জানান, এই সংকট শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান তিনি।
নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড নিয়েও কথা বলেন ইউনূস। তিনি উল্লেখ করেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে সরকারের কাছে কোনো দল বা গোষ্ঠী আইনের ঊর্ধ্বে নয়। জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তাই এখন সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার।
সাক্ষাৎকার জুড়ে ইউনূস বারবার জোর দিয়ে বলেন যে, বাংলাদেশ এখন পরিবর্তনের পথে। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী দেশকে নতুন দিশায় নিয়ে যেতে হলে ঐক্য ও ধৈর্যের প্রয়োজন। তাঁর মতে, ভিত্তিহীন অভিযোগ বা বিভ্রান্তিকর প্রচারণা দেশকে পিছিয়ে দিতে পারে, তাই বাস্তব চিত্র বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা জরুরি।