দেশের গণমাধ্যম সত্য প্রচারে শঙ্কিত নয় বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, গণমাধ্যম হলো চলমান সমাজের দর্পণ। তারা সত্য প্রচারে নির্ভীক।বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ‘গণমাধ্যম সত্য প্রচারে শঙ্কিত’ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আজ এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন কাদের।ওবায়দুল কাদের বলেন, করোনাভাইরাসের আগ্রাসী তাণ্ডবে সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও প্রতিদিনের যাপিত জীবন পতিত হয়েছে এক অবর্ণনীয় সংকটে।
জীবনের পাশাপাশি জীবিকা এবং স্বাস্থ্যের ঝুঁকিও পৌঁছেছে চরম পর্যায়ে। করোনার ফলে সৃষ্ট সংকটময় এই সময়ে সাংবাদিক বন্ধুগণ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করে চলেছেন। প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে সংবাদকর্মীরা সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে অগ্রগণ্য। অধিকাংশ গণমাধ্যমের কর্মীরা দায়িত্বশীলতার সাথে ইতিবাচকভাবে কাজ করে চলেছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর পক্ষ থেকে দায়িত্বশীল এইসব সাংবাদিক বন্ধুদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
এ সময় মির্জা ফখরুলের প্রসঙ্গে এনে কাদের বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গণমাধ্যম সত্য প্রচারে শঙ্কিত। আমরা বলতে চাই, গণমাধ্যম হলো চলমান সমাজের দর্পণ। তারা সত্য প্রচারে নির্ভীক। বরং তারা বিএনপির সৃষ্ট গুজব প্রচারে অনীহ।‘কাদের বলেন, দেশবাসী লক্ষ্য করেছে,
গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন আন্দোলনে সরকারবিরোধী প্রচারণায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সকল ক্ষেত্রে বিএনপি কীভাবে গুজব ছড়িয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার অপচেষ্টা চালিয়েছে এবং গুজবভিত্তিক রাজনীতির বৈধতা দিয়েছে। সেই কারণে সংকটময় এই সময়ে জনগণের পাশে না দাঁড়ানো বিএনপির মিডিয়াবাজির রাজনীতিতেও ভাটা পড়ায় তারা গণমাধ্যমকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কর্মভীরু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীররা নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে বাক্যালাপে বীরত্ব প্রদর্শন করছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর পর সদ্য স্বাধীন দেশে দেশবিরোধী নানা অপতৎপরতা শুরু হয়। দেশের জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ না থেকে বিদেশের টাকায় রাতারাতি সংবাদপত্র প্রকাশ করে জাতীয় বিভাজন ও সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করা হয়। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প থেকে জাতিকে রক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলীয়ান হয়ে সাম্যভিত্তিক সমাজ নির্মাণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘গণতন্ত্র’ প্রত্যয়টির চেয়ে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির উপর জোর দিয়েছিলেন।
তিনি জানতেন, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি কায়েম না হলে গণতন্ত্র টেকসই হবে না। বাকশাল ছিল সেই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার অভিযাত্রা এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান নিজেই বাকশালের কার্যকরী সদস্য ছিলেন। বাকশাল কোন একদলীয় ব্যবস্থা ছিল না। এটি ছিল সকল মত-শ্রেণি-পেশার সমন্বয়ে একটি জাতীয় দল।
‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মন্তব্য করেছেন, বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ৪টি পত্রিকা ব্যতীত সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়। তার জ্ঞাতার্থে জানাতে চাই, তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকারের সময় দৈনিক, সাপ্তাহিক ও অন্যান্য মিলে ১২৬টির মতো সংবাদপত্র প্রকাশিত হতো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবাদপত্রের জগতে বস্তুনিষ্ঠতা ও দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠার জন্য সাংবাদিকদের মাধ্যমে গঠিত কমিটির সুপারিশে একটি কাঠামো দাঁড় করিয়েছিলেন মাত্র। ‘
বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, কথায় কথায় বিএনপি নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন দেশে গণতন্ত্র নেই। দেশে যদি গণতন্ত্র না-ই থাকে তাহলে বিএনপির নেতৃবৃন্দ কীভাবে সরকারের বিরুদ্ধে এত মিথ্যাচার করার সুযোগ পান? বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে হ্যাঁ-না ভোটের মাধ্যমে ৯৯ শতাংশ ভোট ডাকাতির কথা দেশবাসী জানে।
সামরিক শাসনতন্ত্রের মোড়কে ১৯৭৯ সালের গণতান্ত্রিক নির্বাচনও দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছিল। সেই ইতিহাস এখনো বই-পুস্তক ও জাতীয় স্মৃতিতে জ্বলজ্বল। সুতরাং বিএনপির মুখে আর যা-ই হোক গণতন্ত্রের কথা শোভা পায় না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পরে অবরুদ্ধ গণতন্ত্রকে শৃঙ্খলমুক্ত করে সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সফল নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা।সর্বোপরি বিবৃতিতে তিনি করোনা সংকট জয়ের লক্ষ্যে দলমত নির্বিশেষে সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের আহ্বান জানান এবং পরম করুণাময়ের অশেষ কৃপায় এই সংকট আমরা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবো বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।